
ভিয়েতনাম ডায়েরিঃ ১১ তম পর্ব
ভিয়েতনাম ভ্রমণ
১১ তম দিনঃ Bai Tu Long Bay
রাতের ডিনার এর একটা অংশ
গত দশ দিন ধরে ভিয়েতনামে আমার অভিজ্ঞতা লিখছি, ছবি পোস্ট করছি। খেয়াল করে দেখলাম আমি যা দেখেছি, আমি যা বলতে চাইছি তার কোন কিছুই লেখাতে তুলে ধরতে পারছিনা। আর ছবি তে তো সৌন্দর্যের কিঞ্চিৎ অংশ ও ফুটে উঠছেনা। তাই আজ লিখতে গিয়ে দ্বিধা হচ্ছে লিখব নাকি!!!
হা লং বে একটি ওয়াল্ড হ্যারিটেজ সাইট। বাই তু লং বে এর পশ্চিম অংশ। দুই জায়গার মধ্যে প্রাকৃতিক গঠনে তেমন পার্থক্য নাই। হা লং বে তে প্রচুর ভিড় আর বাই তু মোটামুটি নিরিবিলি। হা লং তুলনামূলক ভাবে সস্তা কারন সাপ্লাইয়ার বেশি। বাই তু শুধু ৪* থেকে উপরের লেভেলের জাহাজ গুলো যায়।
এটা আমাদের প্রথম বিয়ে বার্ষিকী, তাই আমরা এক্সক্লুসিভ কিছুই চয়েজ করলাম এবং ইট্স রিয়েলি দা গুড ডিসিশন। এত সুন্দর, এত সুন্দর, এত সুন্দর। যারা হানিমুন কোথায় করবেন ভাবছেন, তাদের জন্য এটা ভাবার মত একটা অপশন।
আমাদের ক্রুজের নাম Cristina Diamond Cruise. ছোট, সুন্দর, অভিজাত একটা জাহাজ। ৪* শুনে আমি ভেবেছি বিশাল জাহাজ। আমি চাঁদপুরের মেয়ে, জাহাজ দেখে আমি তো হতাশ। চাঁদপুর, বরিশালের বিশাল বিশাল লঞ্চের অর্ধেক। ভেতরে ঢুকে আমি অবাক। বিশ্বাস করেন, আমাদের দেশের হয়তো তুলনামূলক কিছু বেশি টাকা আছে, কিন্ত রুচি কিছুই নাই।
জাহাজ কোম্পানির মিনিবাস ই সকাল ৮.৩০ য় আমাদেরকে হোটেল থেকে পিক করে। সব জাহাজ ই শুধুমাত্র ওল্ড কোয়ার্টার থেকে পিক করে। তাই ক্রুজ ভ্রমন করতে চাইলে হোটেল হ্যানয় এর ওল্ড কোয়ার্টারেই বুক করতে হবে।
মিনিবাস আমাদের নিয়ে জেটিতে পৌঁছাল দুপুর ১২.৩০। তারপর নৌকায় করে জাহাজে। ডাবল বেড, প্রাইভেট ব্যালকনি রুম দেখে আমি তো বাকহারা। আর আধুনিক টয়লেটের কথা আর বললাম না।
দুপুরে ১৫ আইটেমের ব্যুফে খাবার শেষে আমরা গেলাম Ving Vueng Fishing Village এ। এখানে ২ টি অপশন ছিল, কায়াকিং অথবা বোট রাইড (মাঝি চালাবে)। আমরা বোট রাইড বেছে নিলাম।
চারদিকে বিশাল বিশাল পাথুরে পাহাড় ঘেরা সমুদ্র, কি যে সুন্দর, কি যে সুন্দর।নীল আকাশের নিচে সাগরের বুকে বৈঠা চালিত নৌকায় বিকালটা যেন আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ বিকাল।
কায়াকিং, ইউরোপীয়ানরা কি সুন্দর
তারপর আমাদের নিয়ে গেল Pearl Farm এ। সেখানে গাইড আমাদের ডিটেইলস বুঝিয়ে দিল কিভাবে মুক্তা চাষ হয়। এখানে থেকে মুক্তার গয়না ও কেনা যায়। কিন্ত মনে হল ফু কোক থেকে এইসব জায়গা বেশি ব্যায়বহুল।
জাহাজে ফেরার পর ব্যুফে নাশতা, জুস খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখলাম। আহা! জীবনে হয়ত বড় কোন পূন্য করেছিলাম।
রাতের ডিনার ব্যুফে ছিলনা। কিন্ত থাকলেই মনে হয় ভাল হত, ওদের অত্যাচার হতে রক্ষা পাওয়া যেত।খেতে খেতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি, কিন্ত ওরা থামছে না। কতগুলো আইটেম, ১০ টা, ১৫ টা, আমি জানিনা। এত ভাল কাঁকড়া আমি জীবনে ও খাইনাই। সালাদ, স্যুপ কোনটার কথা বলব। আসলে ভিয়েতনামে এসে গত কয়দিনে ভুলেই গিয়েছিলাম পেট ভরা খাবার খাওয়ার কথা।
খাওয়ার টেবিলে আমরা মোট ৫ দেশের মানুষ ছিলাম। এত ইন্টারেক্টিভ ডিনার আমি আগে কখনো পাইনি। ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ এমন ভাবে গল্প করছে যেন তার কত দিনের চেনা।
এরপর কারাওকে আর স্কুইড ফিসিং।
বাই তু লং বে তে আসলে একা অথবা জীবন সংগি নিয়ে আসাই ভাল। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবেনা।
চাইলে কোন এক্টিভিটিজে অংশ না নিয়ে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত সময় কাটাতে পারেন, কেউ আপনাকে বিন্দুমাত্র বিরক্ত করবেনা।
৩ দিন ২ রাতের এই প্যাকেজে আমাদের খরচ জনপ্রতি ২৫০ ডলার। জাহাজের ওয়েবসাইট, বুকিং.কম, আগোডায় প্রাইস আরো বেশি ছিল। দেশে থাকতেই আমরা এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ভিয়েতনামি এজেন্ট দিয়ে বুক করিয়েছি। কিন্ত জাহাজে এসে দেখলাম বাকিরা আরো কমে বুক করেছে, কেউ কেউ ১৫০ ডলারে ও পেয়েছে। আমাদের হোটেলে থেকেও এক ই জাহাজ আরো কমে অফার করেছে। মনে হয় ব্যাপারটা চাহিদা-যোগানের উপর। আমার মনে হয় দেশ থেকে অনলাইনে বুক না করে ভিয়েতনামে এসে দামাদামি করে ঠিক করাই ভাল।
বাই তু লং বে তে আরও চলে Viola, Oriental Sale, Athena ইত্যাদি। আমার মনে হয় একটু খরচ বেশি হলেও হা লং এর চেয়ে বাই তু লং ভাল।
বিঃদ্রঃ এখানে জেলেরা নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে সাগর থেকে অপচনযোগ্য ময়লা তুলে ফেলে, যাতে ইকোসিস্টেম নস্ট না হয়। আর ভাবেন আমরা কি করছি।
0 Comments