
ম্যাপ নিয়ে আলাপ-চিন্তন ~ পর্ব ১
পাঠ ০১
কোথাও যখন আমরা যায়, টেবিলের উপর একটা কাগজের মানচিত্র ছড়িয়ে রাখার হয়তো কিছু বিশেষ থাকতে পারে। হ্যাঁ, আমি ম্যাপের কথায় বলছি। যা দেখলে আমার মনে হয়, চোখের সামনে থাকা সম্ভাবনা একটি বিরাট বিশ্বের মতো।
মানচিত্র দেখলে আমার মধ্যে এমন অনুভূতি আসে, দেখতে যেন অনেক কিছুই আছে, যা বুঝাও অনেক কঠিন। তাই হয়তো ছোট্ট একটি দেশের ভেতরে আছেও এতোকিছু। এসব জায়গাগুলো অন্বেষণ করার মতো শখ জাগে। যখন আমি প্রথম কেউক্রাডং গিয়েছিলাম, তখন থেকেই ম্যাপ দেখলে অনেক কিছু শিখার একটা ইচ্ছা জাগ্রত হয়। অনলাইন মানচিত্রগুলি সেই অনুভূতির একটি দৃশ্যমান উপস্থাপনা, আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্য কোথাও এটা প্রতিলিপি করতে সক্ষম হয় নাই। বর্তমানের যুগে, মোবাইল থেকেই এই অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা যায় সহজে, যা আমিও প্রায় ১ বছর ধরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং কার্যধারার মধ্যে শিখেছি, নিজের থেকেই।
কোন স্থানে অবস্থিত বস্তু সমূহের অবস্থান এবং সম্পর্কের দৃষ্টিগ্রাহ্যের সাধারণ প্রকাশ হচ্ছে মানচিত্র। অনেক মানচিত্র স্থির, ত্রি-মাত্রিক স্থানের দ্বি-মাত্রিক প্রতিরূপ; আবার কিছু মানচিত্র পরিবর্তনশীল, এমনকি ত্রিমাত্রিকও হতে পারে (2D/3D View)। মানচিত্র বলতে সাধারণত ভৌগোলিক মানচিত্রকেই বোঝানো হয়, তবে মানচিত্র হতে পারে কোন স্থানের বাস্তব বা কাল্পনিক, এতে স্কেল বা অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে।
Google Map এর সাথে আমরা সবাই একটু হলেও পরিচিত আছি। কোনো ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে সহজতর করার এবং সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে, গুগল মানচিত্র নিয়ে ধারণা থাকা খুব বড় একটা হাতিয়ার মনে হয়েছে। কোনো পাহাড়ে যখন ঘুরে বেড়ায়, কিছু না জানলে কেমন যেন নিজেকে "Empty-Headed" মনে হয়। কিন্তু ইদানিং, অনেক কিছু নিয়ে ধারণা যখন পেতে শিখেছি, কোনো মুহুর্তেই নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সম্ভব হয়। ম্যাপ নিয়ে ক্ষুদ্রতম জ্ঞান, যেকোনো পাহাড়ি অভিযানে, সবার জন্য রাখাটা খুব প্রয়োজন। কেউ শুরুতে হয়তো, মানচিত্রে সঠিকভাবে কো-অর্ডিনেট আর জিপিএস উপলব্ধি করে যেতে পারে না। কিন্তু নিজের মনে উত্তর / দক্ষিণ / পূর্ব / পশ্চিমের ব্যাখ্যাটা ভালো জানা হয়ে যায়।
ভ্রমণের পরিকল্পনা আরো সুন্দরভাবে ধারণ করা যায় এবং কোনো একটা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অনেকরকম সুযোগ আর উপায় খুঁজতে সহায়তা করবে। এমনকি গুগল ম্যাপের মধ্যে পিন ড্রপ ও উত্তেজনাপূর্ণ। একটি মানচিত্রে যেকোনো রুট তৈরি করতে ম্যাপের ভৌগোলিক ধারণা নিয়ে সংগঠিত থাকতে হবে, যা মনে পুরো যাত্রার একটি ছবি অঙ্কন করে রাখতে সহায়তা করে। গুগল মানচিত্র আমাদের ভৌগোলিক অর্থে যাত্রাপথ নির্ধারন করতে এবং ট্রেইলের উপায় বুঝতে সাহায্য করে।
বান্দরবান/রাঙামাটি/খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় যারা সচরাচর ট্রেকিং অভিযানে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, তাদের মধ্যে অনেকেই ট্রেকিং এর চেয়ে, ট্রেকিং এর বিভিন্ন কার্যকলাপ / কার্যধারার ব্যাপারে শিখতেও জানতে আগ্রহী। কিন্তু, সবার পক্ষে আগ্রহ থাকলেও এটা নিয়ে চর্চা করার বা জানার ইচ্ছা থাকে না। পরবর্তীতে, জানার জন্য ম্যাপে দেখলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
Google Map এবং Google Earth এর ভৌগোলিক ধারণা সহ, ন্যাভিগেশন এবং ম্যাপ রিডিং এর ব্যাসিক ধারণাগুলোও থাকা প্রয়োজন হয়। সবগুলো মিলিয়ে, নিজের মতো সাজিয়ে ১০টি ভাগে বিভক্ত করেছি।
[ক] প্রাথমিক অনুবন্ধ (Primary Tutorial)
(i) Google Map নিয়ে পরিচয়
(ii) Google Earth নিয়ে পরিচয়
(iii) ম্যাপের নির্দিষ্ট কোনো অংশের Satellite View নিয়ে ধারণা
(iv) ম্যাপের কম্পাস ডিরেকশন নিয়ে ধারণা
[খ] বেসিক ন্যাভিগেশন (Basic Navigation)
(i) ম্যাপে, পূর্বে যাওয়া ট্রেইল গুলো নিয়ে খোঁজ করা
(ii) ট্রেইলের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট (ঝিরি/খাল/নদী/ঘন জঙ্গল/খোলা জঙ্গল/স্পষ্ট পথ/অস্পষ্ট পথ/চূড়া/ঝর্ণা/জুমঘর/জুম/পাড়া ইত্যাদি) চিহ্নিত করা
(iii) যাত্রাপথের উচ্চতা নিয়ে যাচাই
(iv) ট্রেইলের কম্পোনেন্ট ভিত্তিতে, যাত্রাপথের সময় আর দূরত্বের আন্দাজ নির্ধারন
(v) পুরো ট্রেইলের চূড়ান্ত যাচাই (Google Map এবং Google Earth উভয়ের সাহায্যে)
[গ] মৌলিক সনাক্তকরণ (Common Identification)
(i) জেলা থেকে উপজেলা সূচিত করা
(ii) বিখ্যাত কিছু সর্বোচ্চ চূড়া এবং তার রেঞ্জ চিহ্নিত করা
(iii) বিখ্যাত কিছু ঝর্ণা এবং এর প্রবহিত ঝিরি চিহ্নিত করা
(iv) বিখ্যাত কিছু ট্রেইলের খাল, নদী ও পাড়া চিহ্নিত করা
(v) ব্যবহৃত ট্রেইল নিয়ে মন্তব্য, ধারণা এবং প্রতীকস্বরুপ বিশ্লেষণ
[ঘ] ভৌগোলিক সনাক্তকরণ (Geographical Identification)
(i) জেলা এবং উপজেলার ক্ষণিক দৃষ্টিপাত
(ii) পাহাড় সারি / রেঞ্জের উপলক্ষণ
(iii) পাহাড় চূড়া (মেইন-পিক/সাব-পিক, প্রমিনেন্স/আইসোলেশন, রিজলাইন, ডিরেকশন ফেস: উত্তর/দক্ষিণ/পূর্ব/পশ্চিম, স্লোপ, স্যাডেল পয়েন্ট এবং শোল্ডার)
(iv) জলপ্রপাত (ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী জলপ্রপাতের ব্যাখ্যা, জলপ্রপাতের আপস্ট্রিম/ডাউনস্ট্রিম, প্রবহিত ঝিরি, স্ট্রিম চেইন)
(v) পানির সোর্স এবং ঝিরি/খাল/নদীর উৎপত্তিস্থল এবং মিলিতস্থল সনাক্ত করা
(vi) সমতল/অসমতল ভূমি, উচ্চ/নিম্ন পৃষ্ঠতল চিহ্নিত করা
(vii) পাড়া এবং পাড়ার জুম/জুমঘর লক্ষ্যে করা
(viii) স্পষ্ট পথ/অস্পষ্ট পথ, ঘন জঙ্গল/খোলা জঙ্গল এবং ঝিরিপথ/গিরিপথ সনাক্ত করা
(ix) উপত্যকা/অর্ধ উপত্যকা এবং নদী/খালের ঘাট/পাড় চিহ্নিত করা
[ঙ] এডভান্সড্ নেভিগেশন (Advanced Navigation)
(i) নতুন কোনো একটা জায়গায় যাওয়ার টার্গেট তৈরি করা (সিঙ্গেল টার্গেট / মালটি টার্গেট)
(ii) ভৌগোলিক সনাক্তকরণ অনুযায়ী টার্গেটের যাত্রাপথ নির্ধারন করা
(iii) যাত্রাপথের উচ্চতা নিয়ে যাচাই (ওয়ান-ওয়ান প্লট / ওভার-অল প্লট)
(iv) ট্রেইলের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট (ঝিরি/স্পষ্ট-অস্পষ্ট পথ/জঙ্গল/খাল/জুমঘর/পাড়া ইত্যাদি) চিহ্নিত করা
(v) ট্রেইলের কম্পোনেন্ট ভিত্তিতে, যাত্রাপথের সময় আর দূরত্বের আন্দাজ নির্ধারন
(vi) পুরো ট্রেইলের চূড়ান্ত যাচাই (Google Map এবং Google Earth উভয়ের সাহায্যে)
[চ] ম্যাপ কো-অর্ডিনেট (Map Co-Ordinate)
(i) প্লটিং মেথড
(ii) ট্রান্সফার মেথড
(iii) Google Map এবং Google Earth এ কো-অর্ডিনেটের পার্থক্য
(iv) বিভিন্ন চূড়া, ঝর্ণা, ঝিরি, পাড়া ইত্যাদির কো-অর্ডিনেট (জরুরি সংরক্ষণ)
(v) ল্যাটিচুড এবং লঙ্গিচুড
[ছ] ট্রেইল তৈরিকরণ (Route Construction)
(i) রউট ক্লাসিফিকেশন ভিত্তিতে ট্রেইলের গঠন সিলেকশন
(ii) Google Map এ সেভ করা জায়গাসমুহের শুদ্ধ বানান
(iii) Google Map এ "কো-অর্ডিনেট" থেকে "পিন ড্রপ" এর ব্যবহার
(iv) রউট নেভিগেশন (Google Map এবং Google Earth উভয়ের সাহায্যে)
[জ] টপো-ম্যাপ নিয়ে ধারণা (Topo-Map)
(i) ভৌগোলিক সনাক্তকরণের যাচাই
(ii) চূড়ার প্রমিনেন্স, স্যাডেল পয়েন্ট/শোল্ডার এবং স্লোপ নিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষণ
[ঝ] টপোম্যাপ এর ব্যাবহারিক (Practical Drilling Of Topo-Map)
(i) "View Ranger" APK এর ব্যবহার
(ii) "GPX Viewer" APK এর ব্যবহার
[ঞ] প্রতিপালন ও সম্ভাব্যতা (Maintenance & Probability)
যদিও কয়েকবার ভালোভাবে সামান্য কিছু অংশের দিকে তাকালে সব কিছু সহজে বুঝা যায়, তারপরও সব কিছু নিয়ে যতো জানতে পারি আরো বেশি জানার আগ্রহ খুঁজে পাই।
Written ByWzeove Venklyn Psarvok



0 Comments