• Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip
  • Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip

সিকিম ভ্রমনের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য এবং একটি কমপ্লিট ট্যুর প্যাকেজের সম্ভব্য বিষয় 8

sikkim
A Travel Guide
In
155 views

সিকিম ভ্রমনের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য এবং একটি কমপ্লিট ট্যুর প্যাকেজের সম্ভব্য বিষয়

ভারত ভ্রমণ

23 Dec 2019, 08:12 pm
( 2367 words, Reading Time: 11.84 min)

স্বল্প খরচে ভ্রমন পিয়াসীদের সবারই সিকিমে ভ্রমন করার সুপ্ত বাসনা রয়েছে। আমি আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে থেকেই সিকিম যাওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলাম, কিন্তু সিকিমে আইনগত ভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিগত ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে ভারত সরকার সিকিম ভ্রমনে বাংলাদেশীদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে অনেক ভ্রমন পিয়াসী মানুষই ভীড় জমায় যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে। কিন্তু ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের ওয়েব-সাইটে পর্যাপ্ত তথ্য ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন আমাদের মতো। কেউ অনুমুতি পান নি, কারো পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে লম্বা সময় লেগেছে। কেউ জানতেন না ভারতীয় ভিসা আবেদনের সাথেই পার্মিশনের ফরম জমা দিতে হয় নাকি পরে দিতে হয়, ইত্যাকার নানা সমস্যার পড়ে সিকিম যাওয়ার বিষয়টি জটিল হয়ে গিয়েছে। আমরাও এমন ভুক্তভোগী হয়ে বেশ কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি যেন আপনাদের কোন প্রকার ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।

প্রথম পরামর্শঃ

যদি ভিসা নিয়ে না থাকেন তবে নতুন ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাংরাবান্ধা বা ফুলবাড়িয়া যে কোন একটি অথবা দুটো পোর্টই উল্লেখ করতে পারেন। তবে বলে রাখি চ্যাংরাবান্ধা থেকে ফুলবাড়িয়া দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগে এবং খরচ ও হয় কম। তাই ফুলবাড়িয়াই প্রেফারেবল।

দ্বিতীয় পরামর্শঃ

যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের থেকে সিকিম যাওয়ার পার্মিশন নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারন এতে আপনার টাকা (৩০০ টাকা) ও অনেক সময় নষ্ট হবে। আপনি চাইলে সরাসরি সিকিমে ঢুকবার পথে Rangpo চেকপোষ্টে ইনার লাইন পারমিট নিতে পারবেন। এজন্য আপনার বাড়তি কোন টাকা বা সময় নষ্ট হবে না। কেবল পার্মিশনের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কপি ছবি, পাসপোর্ট ও ভিসার ২ টি করে ফটোকপি। ২০ মিনিটের মধ্যে আপনি ইনার লাইন পার্মিট পেয়ে যাবেন। যেটি খুব যত্ন সহকারে আপনাকে পুরো ভ্রমন সময়ে সাথে সাথে রাখতে হবে। আর ফিরে আসার সময় অবশ্যই Rangpo চেকপোষ্টে অবহিত করে আসবেন যে আপনি সিকিম ত্যাগ করছেন। না হলে তাদের রেকর্ডে আপনি ব্লাক লিষ্টেড হয়ে থাকতে পারেন, এবং আপনি অন্যান্য বাংলাদেশী ট্যুরিষ্ট দের সম্পর্কে একটি খারাপ অভিব্যাক্তি রেখে আসতে পারেন।
Rangpo ফরেনার ইনফরমেশন সেন্টারের ফোন নম্বর হলোঃ +৯১ ৩৫৯২ ২০৯ ০৯০
এটি খোলা থাকে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যা ৭ টার ভেতরে পৌঁছে যাওয়াটা রিস্ক-ফ্রি।

তৃতীয় পরামর্শঃ

ভ্রমন কারীর কিছু ডকুমেন্ট কমপক্ষে ১০ কপি করে রাখুনঃ এগুলো হলো পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১০ কপি, পাসপোর্ট ও ভিসার ১০ টি করে ফটোকপি। এগূলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবেন, নতুবা সিকিমে প্রতি কপির জন্য আপনাকে প্রায় তিন গুন পয়সা গুনতে হবে। কেবল মাত্র ইনার লাইন পার্মিট গ্যাংটকে গিয়ে ১০ কপি করিয়ে নিবেন।
একটি জরুরী বিষয় বলে রাখি, সেটি হলোঃ ইনার লাইন পার্মিট শুধুমাত্র গ্যাংটকে প্রবেশের পার্মিশন, কিন্তু আপনি যদি গ্যাংটকের বাইরের অন্যান্য ট্যুরিষ্ট স্পট গুলো তে যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিটি জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি ডকূমেন্ট এর কমপক্ষে ২ টি সেট ট্যুরিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এবং এ কাজটি আপনি একা করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সিকিম সরকার অনুমোদিত কোন ট্যুর অপারেটর এর সাহায্য নিতে হবে এবং অবশ্যই একজন গাইড নিতে হবে। আর প্রতিটি স্পটে পার্মিশনের জন্য আপনাকে আগের দিন ট্যুরিষ্ট অফিসে ডকুমেন্ট গুলো ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আগের দিন জমা দিলে আপনি পরের দিন পার্মিশন পাবেন। আর পার্মিশন পাওয়ার জন্য আপনি যে গাড়িতে করে যাচ্ছেন সেই গাড়ির নম্বর ও ড্রাইভারের বৃত্যান্ত থাকতে হবে, যে কাজটি আপনার ট্যুর অপারেটর করে দেবে।

চতুর্থ পরামর্শঃ

সিকিম ট্যুরের ক্ষেত্রে একটি গ্রুপে যাওয়াটা ভালো, এতে করে আপনার গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কম পড়বে। গ্রুপের সাইজ ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৮ জন হলে ভালো হয়। ৪ জন হলে টাটা ইনোভা টাইপ ছোট গাড়িতে ভ্রমন করতে পারবেন আর ৮ জন হলে টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করতে পারবেন। এতে করে খরচ কম হবে। তবে যেহেতু পাহাড়ি পথ, তাই ছোট গাড়ি অপেক্ষা টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করা অনেক নিরাপদ।

পঞ্চম পরামর্শঃ

আমরা হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে আজকাল বিভিন্ন অনলাইন সাইটে গিয়ে বুকিং দিয়ে থাকি। যেগুলোতে আসলে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। এই সাইট গুলো কৃত্রিম সংকট তৈরী করে হোটেল প্রাইস বাড়িয়ে আপনাকে পানিকড করে তুলবে। তাঁর থেকে জায়গায় পৌঁছে একটু সময় নিয়ে নিজে দামাদামি করে হোটেল নিজ চোখে দেখে নিয়ে নেয়াটাই ভালো। আমরা প্রথমে অনলাইনে বুকিং দিয়ে সেটি ক্যানসেল করে গ্যাংটকে পৌঁছে হোটেল ঠিক করি। এতে করে আমাদের হোটেন ভাড়া প্রায় অর্ধেক এ হয়ে গিয়েছিলো।

ট্যুর অপারেটরঃ

আপনারা যে হোটেল এ থাকবেন সে হোটেল থেকেই আপনাদের কাছে ট্যুর প্যাকেজ এর অফার করবে। অথবা আপনি চাইলে বাইরের ট্যুর অপারেটরের থেকেও ট্যুর এরেঞ্জ করিয়ে নিতে পারেন। আমরা প্রথমে আমাদের হোটেল থেকে একটি ট্যুর প্লান নিয়েছিলাম যেটি বেশ ব্যায়বহুল ছিল। আমরা যে কোন একটি কারনে সেটি আর নেইনি।
আমরা খুব লাকি যে পরে আমরা খুব ভালো একজন ট্যুর এজেন্ট পেয়েছিলাম, যে প্রায় অন্য সব ট্যুর অপারেটরের থেকে অনেক কম খরচে আমাদের ট্যুর এরেঞ্জ করে দিয়েছে। ওর নাম মিলান তামাং। ওর ফোন নম্বর হলোঃ +৯১ ৯৬০৯৮ ৭৯৪২০। আপনি হোয়াটসএপ এ ওর সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে পারবেন। ওর হাতে ট্যুরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। সুবিধা হলো সে জান-প্রান দিয়ে আপনার ট্যুর এরেঞ্জ করার জন্য যা যা দরকার তা করে দিবে এবং সেটি অন্য যে কোন ট্যুর অপারেটরের থেকে প্রায় অর্ধেক খরচে। আর অসুবিধা হলো- ওর কোন অফিস নেই আর ও খুব অগোছালো। তাই প্রতিটি ডকুমেন্ট তাকে দেয়ার ক্ষেত্রে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে হবে। আর ও ইংলিশ খুব একটা বোঝে না, বাংলা হালকা হালকা বোঝে আর হিন্দি খুব ভালো বোঝে।

ইন্ডিয়ান সিম-কার্ডঃ

সিকিমে ফরেনার দের কাছে ইন্ডিয়ান সিম বিক্রি করার পার্মিশন নেই। তাই বাংলাদেশ বর্ডার পার হয়েই অথবা শিলিগুড়ি থেকে অবশ্যই সিম কার্ড কিনে একটিভ করে নিবেন। সিম কিনতে এক কপি ছবি ও পাসপোর্ট-ভিসার ফটোকপি লাগবে। ইন্ডিয়ান সিম না কিনে সিকিমে গেলে আপনার যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে, যেটি আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছে। সিকিমে ভালো নেটওয়ার্ক পায় “জিয়” ফোনে। আপনারা সেটি কিনে নিতে পারেন।

ভ্রমনের শ্রেষ্ঠ সময়ঃ

সিকিম ভ্রমনের সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ-এপ্রিল। এ সময়ে আপনি পাহাড়ের চূড়ায় বরফ দেখতে পারবেন এবং সবুজ প্রকৃতি ও সচল ঝর্না দেখতে পারবেন তবে যারা ফ্রেশ বরফ দেখতে চান তারা যেতে পারেন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের ভেতরে। তবে এ সময় প্রচন্ড শীত থাকে, ফলে আপনাকে প্রচুর পরিমানে শীতের কাপড় পড়তে হবে। বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৬ এর নিচে।

কাপড়ঃ

মোটা জ্যাকেট বা সোয়েটার, ফুলহাতা টিশার্ট, পাতলা সোয়েটার, মোটা মোজা, কেডস, কানঢাকা টুপি, হাতমোজা। যেহেতু স্নো ফল হতে পারে, তাই সবাইকে কয়েক লেয়ার এ কাপড় পড়তে হবে।

এবারে আমাদের ভ্রামন বৃত্তান্ত দিয়ে দিচ্ছি বিস্তারিত
আমাদের গ্রুপ মেম্বার ছিল ৮ জন, যার ভেতরে ২ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিলো ১৫৫০০ টাকা। আমরা মোট ৭ রাত ৭ দিন (২০-২৭ ডিসেম্বর) ভ্রমন করেছি।

আমরা ভ্রমন শুরু করেছিলাম ২০ ডিসেম্বার শাহ আলী পরিবহনের রাতের এসি গাড়িতে। ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি ৯০০ টাকা। শাহ আলী ছাড়া অন্যান্য ভালো গাড়ির মধ্যে আছে- মানিক এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস ইত্যাদি। এর মধ্যে এসআর ট্রাভেলস এর বর্ডার পরিসেবা সবচেয়ে ভালো। ইন্ডিয়া যেতে আপনাকে ভ্রমন কর দিতে হবে ৫০০ টাকা, যে কাজিটি আপনি ঢাকা থেকে করে নিতে পারেন সোনালী ব্যাংক নিউমার্কেট শাখায় (অবশ্যই পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে)। আপনি চাইলে বর্ডার থেকেও কাজটি করিয়ে নিতে পারেন আপনার গাড়ির কোম্পানির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ভ্রমন কর ৫০০ টাকার সাথে সার্ভিস চার্য হিসেবে অতিরিক্ত ২০০-৩০০ টাকা আপনাকে গুনতে হবে। তবে সব ঝক্কি ঝামেলা ওরাই আপনার হয়ে নিয়ে নিবে।

১ম দিনঃ
• সকাল ৭ টায় বুড়িমারি চ্যাংড়াবান্ধা পোর্টে পৌঁছে প্রথমে ভ্রমন কর প্রদান ও বর্ডার পারের জন্য আমরা শ্যামলি পরিবহনের কাছে আমাদের ৮ জনের পাসপোর্ট জমা দেই এবং ৫৬০০ টাকা দেই। এই ফাঁকে আমরা বুড়ীর হোটেলে ভাত, আলুভর্তা, ডিমভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুরে খেয়ে নেই। পার হেড খরচ হয়েছে ৪০ টাকা। এরপর এক কাপ চা ৫ টাকা।
• ৯ টায় বর্ডার খোলার পর আমাদের পার হতে হতে হতে প্রায় ১১ টা বেজে যায়। পার হয়ে ওপাশ থেকে আমরা ২০০০ রুপি একটি টাটা সুমো রিজার্ভ করে নেই (ইউজুয়ালি ২০০০-২৪০০ রুপি ভাড়া হয়ে থাকে) শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত। শিলিগুড়ি যেতে লাগে ২।৩০ মিনিট হতে ৩ ঘন্টা।
• শিলিগুড়ি জংশনে আমরা পৌছাই দুপুর আড়াই টায়। আর দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য কোন সময় নষ্ট করিনি কারন আমরা দিনের আলোতে পাহাড়ের রুপ দেখতে চেয়েছিলাম। আমরা একটি জীপ রিজার্ভ করি গ্যাংটক পর্যন্ত, যার ভাড়া পড়ে ২৫০০ রুপি (এছাড়া কেউ সিঙ্গেল গেলে ২৫০ রুপি পার হেড শেয়ার্ড জীপে যেতে পারেন)। আমরা দুটো সিট এক্সট্রা নিয়েছিলাম দেখে আমাদের ৫০০ রুপি বেশি দিতে হয়েছিলো।
• আমরা তিনটায় শিলিগুড়ি ত্যাগ করি ও র্যাংেপো পৌছাই রাত ৭টায়। সেখান থেকে পার্মিশন নিয়ে গ্যাংটকে পৌছাই রাত সাড়ে আট টায়। পৌঁছে হোটেল খুজে বের করি এমজি মার্গের খুব কাছে, লাল বাজারের ফ্লাই ওভারের সাথে লাগোয়া “আমবা রিজেন্সি” তে। ভাড়া পড়েছে রুমপ্রতি মাত্র ১৫০০ রুপি। এক রুমে ছিল একটি ডাবল বেড ও একটি সিঙ্গেল বেড, ফলে আমরা তিনজন এক রুমে ছিলাম। আমবা রিজেন্সি থ্রি-ষ্টার মানের হোটেল, অত্যান্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও অতিথিপরায়ন। আমরা সবাইকে সাজেষ্ট করবো অবশ্যই এই হোটেলে থাকতে। সকাল বেলায় এখান থেকে আপনি কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা এর ক্লিয়ার একটি ভিউ পাবেন। আর হোটেলের ছাদে রয়েছে সুসজ্জিত রুফটপ ডাইনিং ও বার। তবে এটি ভেজিটেরিয়ান রেষ্টুরেন্ট। এছাড়া ফ্রি ওয়াইফাই ও বাথরুমে গিজার ছিল।
আমবা রিজেন্সি এর নম্বর হলোঃ +৯১ ৮২০৯৭৩৭৩০৩।

২য় দিনঃ

সকালে উঠেই নাস্তা (আগারওয়াল রেষ্টুরেন্ট-জীপ ষ্ট্যান্ডের অপজিটে) করতে গিয়ে আমাদের ট্যুর অপারেটর কাম গাইড মিলান তামাং এর সাথে দেখা হয়। তাঁর কাছ থেকে আমরা গ্যাংটক সিটি সাইট সিয়িং এর একটি প্যাকেজ নেই। এই প্যাকেজে ছিল ১০ টি সাইট সিয়িং এর জন্য ২ টি টাটা ইনোভা গাড়ি, যাতে আমরা ৮ জন গ্যাংটক ঘুরে বেড়িয়েছি। ২ টি গাড়ির ভাড়া ছিল ২৬০০ রুপি।
ঘুরতে যাওয়ার আগে আমরা মিলানের কাছে আমাদের রেসটিকটেড এরিয়া পার্মিটের জন্য সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে যাই। আমাদের নর্থ সিকিমের ইউম্থাম ভ্যালি ও জিরো পয়েন্ট যাওয়ার জন্য ৩ কপি ছবি সহ সব ডকুমেণ্ট ৩ কপি করে দিয়ে যাই। সন্ধ্যায় ফিরে আসতে আসতে মিলান সব ডকুমেণ্ট রেডি করে ফেলে। সন্ধ্যায় আমরা রেসটিক্টেড এরিয়া পার্মিটের ফরমে সাইন করে আমাদের পাসপোর্ট মিলানের কাছে জমা দেই। আমরা নর্থ সিকিমের ইউম্থাম ভ্যালির জন্য ৮ জনের যে প্যাকেজটি নেই সেটির দাম ছিল ১৩৫০০ রুপি। এর মধ্যে ছিল টাটা সুমো গাড়ি, একটি ডিনার, একটি ব্রেকফাষ্ট, দুটি লাঞ্চ ও রাতে একটি হোটেলে থাকার সুবিধা।
সাইট সিয়িং শেষে আমাদের ড্রাইভাই কার্মা আমাদের গোর্খা হোটেলে খাওয়ার পরামর্শ দেয়, যেখানে বাঙ্গালী, নেপালি ও ভুটিয়া খাবার পাওয়া যায়। আমরা পেট পুরে প্রতিজন ১৫০ রুপি দিয়ে গরুর মাংশ, আনলিমিটেড ভাত, সবজি ও ডাল খাই। এটি ১৫০ রুপির পেট চুক্তি প্যাকেজ। আমার দেখা মতে গ্যাংটকে সবচেয়ে ভালো অফার। গোর্খা হোটেলের লোকেশন হলো লাল বাজারের উপড়ে। আমরা আমাদের লাঞ্চ ও ডিনার এখানেই সেড়ে নেই।

৩য় দিনঃ

সকালে উঠেই আমরা এমজি মার্গের চঞ্চল বাংলা হোটেলে পেট পুরে খেয়ে নেই। এখানে ভাত, ২ রকম সবজি, ডিম ভাজি ও ডালের প্যাকেজ ৯০ রুপি (পেটচুক্তি)। আলু পরাটা, সবজি ও চাটনি ৫০ রুপি। অসাধারণ একটি রেস্টুরেন্ট।
তারপর ১১ টার দিকে ২টি টাটা ইনোভা (২ গাড়ি ২০০ রুপি) নিয়ে সাঙ্গু জীপ ষ্ট্যান্ড এ যাই এবং লাচুং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথে বাটারফ্লাই ওয়াটার ফলস, কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট ও অন্যান্য কিছু স্পটে থেমে থেমে ছবি তুলি। দুপুর ২।৩০ এ জীপ আমাদের একটি রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে যায়, যেটি আমাদের প্যাকেজ এর আওতার মধ্যে ছিল। এখানেও বুফে খাবার, আর খাবারের স্বাদ ও অসাধারণ।
আমরা লাচুং পৌছাই সন্ধ্যা ৭ টায়। এরপরে প্যাকেজের আওতাভুক্ত একটি হোটেলে উঠি। হোটেলের মান খুবই সাধারন ছিল। রাতে হোটেলের নিজেদের রেষ্টূরেণ্টে আমরা ভাত, মুরগীর মাংশ, ডাল , সবজি ও চাটনি দিয়ে পেট পুরে খেয়ে নেই। সেখানে আমাদের সাথে আরো কিছু বাঙ্গালী পরিবারের সাথে পরিচয় হয়, যারা কোলকাতা থেকে এসেছিলো। তারা আমাদের সাথে গান আর আড্ডায় সামিল হয়।
রাতে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬ ডিগ্রী। যা আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। প্রায় জমে হিম হয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি যে বাইরে ঝকঝকে পুর্নিমায় বড় বড় পর্বতের গ্লেসিয়ার গুলো রুপালি দেখাচ্ছে। খুশিতে আমরা যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলি। পরদিন সকাল ৫ টায় উঠতে হবে দেখে রাত ১।৩০ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ি।

৪র্থ দিনঃ

সকালে উঠেই ড্রাইভার বল্লো যে ইউম্থাম ভ্যালি পর্যন্ত আমরা হয়তো যেতে পারবো না কারন গতকাল নাকি বরফের কারনে রাস্তা বন্ধ ছিল। সে আমাদের নতুন একটা প্রস্তাব দিল যে সে আমাদের “কাটাও” নামক আরেকটি স্থানে নিয়ে যাবে যেটি প্রায় ১৪৩০০ ফিট উপড়ে এবং তাঁর জন্য আমাদের ৩০০০ রুপি একস্ট্রা দিতে হবে। আমাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এটি ড্রাইভারের চালাকি। তাই আমরা বললাম আমরা “কাটাও” যেতে আগ্রহী না, বরং আমাদের ইউম্থাম ভ্যালিতেই যেতে হবে। পথে যদি রাস্তা ব্লক পাই তাহলে আমরা ফিরে আসবো, তবুও আমরা ইউম্থাম ভ্যালির দিকেই যাবো। ড্রাইভাই বেশ কাচুমাচু করে রাজি হলো। আমরা রোনা দিয়ে দেখলাম রাস্তায় বরফ আছে একথা ঠিক তবে ইউম্থাম ভ্যালিতে যাওয়ার পথ খোলা। আমরা ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ইউম্থাম ভ্যালিতে পউছালাম। এর বর্ননা করছি না কারন ছবিতেই আপনারা দেখতে পাবেন এটি কতটা সুন্দর।পৌঁছে ৫০ রুপি করে স্নো-বুট ভাড়া করে নিলাম আর প্যাকেজের আওতাভুক্ত ব্রেকফাষ্ট করে নিলাম (জ্যাম-বাটার ব্রেড দিয়ে)। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপি ১২৮০০ ফুট উচ্চতার ইউম্থাম ভ্যালিতে লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে আমরা লাচুং এ ফিরে আসলাম দুপুর ১২ টায়। সেখানে প্যাকেজের আওতাভুক্ত লাঞ্চ করে আবার রওনা হলাম গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে। পউছালাম সন্ধ্যা ৭ টায়। পৌঁছে মিলান কে সাঙ্গু লেক যাওয়ার জন্য ৮ জনের তিন কপি করে সব ডকুমেন্ট দিয়ে দিলাম (তিন কপি ছবি সহ)। ফরমে সাইন করে পাসপোর্ট দিয়ে দিলাম মিলান কে। পরদিন আমাদের সাঙ্গু প্যাকেজ ঠিক হলো ৫০০০ রুপিতে। রাতে আমরা এমজি মার্গের শেষ প্রান্তে বাঙ্গালী হোটেল নামক একটি হোটেলে ২৫০ টাকা প্যাকেজে খেতে গিয়ে রীতিমতো বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরত আসি। বাঙ্গালী হোটেল কোলকাতার এক লোকের পরিচালিত একটি হোটেল, যার রান্না ও ষ্টাফদের ব্যবহার রিতিমতো আপনার ব্রেন স্ট্রোকের কারন হয়ে যেতে পারে। যারা নেক্সট টাইম যাবেন তারা অবশ্যই এই হোটেল থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবেন।

৫ম দিনঃ

সকালে উঠেই ইষ্ট সিকিমের সাঙ্গু লেক বা সামগো লেকের দিকে রওনা হলাম যেটি ১২১০০ ফিট উপড়ে পাহাড় ঘেরা অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। এর বর্ননা করছি না কারন ছবিতেই আপনারা দেখতে পাবেন এটি কতটা সুন্দর। সেখানে পৌঁছে ৫০-১০০ রুপিতে স্নো-বুট ও ২৫ রুপিতে হাতমোজা ভাড়া করলাম। প্রায় ৪ ঘন্টা সেখানে থেকে দুপুরের লাঞ্চ করলাম (২০০ রুপি পার হেড-অসাধারন রান্না)। সময় সল্পতার কারনে আমরা সেখানে ক্যাবল কারে চড়তে পারিনি (ক্যাবলকার এর ভাড়া ৩২৫ রুপি, এবং এর লাইন অনেক দীর্ঘ)। বিকেলে আমরা সরাসরি হোটেল থেকে আমাদের লাগেজ নিয়ে দরগাহ রোডের শিলিগুড়ি ষ্ট্যান্ডে চলে আসলাম। ২৫০০ টাকায় একটি টাটা সুমো গাড়ি রিজার্ভ করলাম শিলিগুড়ি এর মাল্লা-গুড়ি সেন্ট্রাল প্লাজা পর্যন্ত। রাতে সেন্ট্রাল প্লাজার পাশে হোটেল ভেঙ্কেটেশ রিজেন্সি তে ১৫০০ টাকা ভাড়ায় রাত কাটালাম (১৫০০ টাকা হিসেবে রুম খুব ভালো এবং থ্রি ষ্টার মানের হোটেল)। ভেঙ্কেটেশ রিজেন্সি এর নম্বরঃ +৯১ ০৩৫৩ ২৫১৪৪২০।

৬ষ্ঠ দিনঃ

সকালে উঠে শিলিগুড়ি শহরের নানা জায়গায় শপিং করে ২ টার মধ্যে হোটেন চেক আউট করে রওনা হলাম বর্ডার এর দিকে। ২০০০ টাকায় গাড়ি নিয়ে চলে এলাম চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডারে। রাতের বাসে করে ২৭ তারিখ সকালে আমরা ঢাকায় পউছালাম।


সবশেষ কথাঃ

সিকিমের পরিবেশ সমগ্র ভারতের অন্য সব জায়গা থেকে খুবই আলাদা। এখানে ওপেনলি স্মোকিং নিষিদ্ধ। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা ও প্লাষ্টিক সামগ্রী ফেলা নিষিদ্ধ। উভয় ক্ষেত্রেই আইনগত ব্যাবস্থা রয়েছে। সেখানকার মানুষ ভারতের অন্য যে কোন জায়গার মানুষের থেকে অনেক বেশি বিনয়ী। সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কাজেই সিকিমে গেলে সেখানে ওপেনলি স্মোকিং করা থেকে ও যেখানে সেখানে প্লাষ্টিক সামগ্রী ফেলা থেকে বিরত থাকুন। একটা বিষয় মনে রাখবেন- আপনার মাধ্যমে আপনার দেশ রিপ্রেজেন্ট হবে। তাই আপনি চাইলেই আপনার দেশের সুন্দর ভাবমুর্তি বাইরের দেশে দিয়ে আসতে পারেন। প্রকৃতি কে এক্সপ্লোর করুন, ভালোবাসুন ও এর যত্ন নিন।

Written Byঅর্ণব মাসুদ

#ভারত_ভ্রমণ #সিকিম_ভ্রমন
  • Share
  • Tweet
  • Share

You Might Also Like...

ইন্ডিয়া ভ্রমনে আখাউড়া -আগরতলা স্থলবন্দর
উত্তরাখান্ড(ভারত) ডায়েরী
আমাদের সিকিম ট্যুর
ভারত ভ্রমণকাব্য

Leave a Reply

By posting comment you will be registered as a user. You can log in by this credential in the future.
Or, fill the comment and register with social network

0 Comments

  • Share
  • Tweet
  • Share

DURBEEN TRAVEL & TOURISM
  • Home
  • About
  • Contact
support@durbeentravel.com

Copyright © 2018 by Shunno-ek Technology. All Rights Reserved.
  • Log in

Sign In

Chose One of the Following Methods.

With Facebook
Or

Sign in Using Your Email Address

Forgot Password?
Don't have an account? Sign up Now