অল্প একটু কালাপাহাড়
মৌলভীবাজার ভ্রমণ
ঢাকা শহরের গাছগুলোকে দেখলে আমার খুব একাকী লাগে। মনে হয়- আহা বেচারা ! কোথায় তাদের থাকার কথা ছিলো চিরতরুণ কোন অরণ্যে। তা না হয়ে এখানে পড়ে আছে !
অফিস থেকে প্রায়ই একটা গাছকে আমি দেখি। পৌষ মাসের ঘন রোদে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়ানো। পাশেই দোতলা বিল্ডিং এর ছাদে অর্ধেক ছায়া পড়ে তার। সিমেন্টের প্রাণহীন ছাদের উপর কি বিসদৃশ, কি বিষণ্ণ লাগে ছায়াটাকে দেখতে ! মনে হয়- ইশ ! এ গাছটা তো পাহাড়ি কোন ছড়ার পাশেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো। তখন ইটপাথরের ওপর না, বরং নুড়ি-পাথরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ হয়ে দেখতো নিজের প্রতিবিম্ব। মাঝে মাঝে বাতাসের সাথে অভিমান করে জলে ভাসাতো একটা কি দু’টো হলদে পাতা…
বলা হয়ে থাকে- বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে সব থেকে উচু বিন্দুটি হলো কালাপাহাড়ের চূড়ো। জায়গাটা মৌলভীবাজারে পড়েছে। একবারে বর্ডার ঘেঁষে। পাহাড়ের ওপর দাড়ালে ওপাশে ত্রিপুরার শহর দেখা যায়। চিনির দানার মত ছোট্ট সাদা বিল্ডিং আর কারেন্টের তার চোখে পড়ে। বাকি পুরোটা গভীর বন। প্রথম যখন দেখেছিলাম, তখন কেমন একটু বিসদৃশ লেগেছিলো ব্যাপারটা আমার কাছে। মনে হয়েছিলো- কেমন আশ্চর্য একটা মফস্বল হয়ে থাকবে সেটা ! বনের মাঝে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের মতন।।
যাই হোক- সে কালাপাহাড়ে যাবার পথে আমার অফিসের ঐ গাছটার মতই অনেক গাছপালা চোখে পড়বে। শুধু পার্থক্য হলো- তাদের কখনো সিমেন্টের ওপর নিজেদের ছায়া দেখতে হয় না। বরং সে ছায়া এলোমেলো শীতকাঁথার মত আবৃত করে রাখে পাহাড়ি গুল্মের গা। দেখবেন- কোন এক নাম-না-জানা পাথুরে ছড়ার ওপর হেলে আছে আমলকির ডাল। বৃক্ষসারির মাথার ওপর দিয়ে একেবেকে হারিয়ে যাওয়া আকাশটাকে দেখে মনে হবে বুঝি নীল এক নদী। মনে হবে- দিগন্তে পৌছে বুঝি এ আকাশই তার প্রগাঢ় জল ঢালছে সুদূর মিশরে, নীলনদের গায়……
আমার ভাবতে ভালো লাগে, একদিন এই শহরের সব গাছেদের বীজ হাওয়ায় হাওয়ায় এমনই এক বনে গিয়ে পৌছুবে। এক জীবনের আক্ষেপ তারা ঘুচাবে গিয়ে ঐ জীবনে !
“পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস ক’রে হৃদয়ের নরম কাতর
অনেক নিভৃত কথা জানিয়াছি; পৃথিবীতে আমি বহুদিন
কাটায়েছি; বনে-বনে ডালপালা উড়িতেছে- যেন পরী জিন্
কথা কয়; ধূসর সন্ধ্যায় আমি ইহাদের শরীরের ’পর
খইয়ের ধানের মতো আমি দেখিয়াছি ঝরে ঝ্র ঝ্র
দু’-ফোঁটা মাঘের বৃষ্টি- শাদা ধুলো জলে ভিজে হয়েছে মলিন….”
বিঃ দ্রঃ অনুগ্রহ করে এমন স্বপ্নময় একটা পৃথিবীকে নোংরা করবেন না। অবশ্য মানুষ এখন এম্নিতেও অনেক সচেতন; যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না পারতে ফেলে না। তাই সবাই মিলে আমরা এ প্রবণতাটুকু আরো বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করতে পারি। আফটার অল-
"We do not inherit this world from our ancestors;
we borrow it from our children !"
Written Byরুবায়েত হোসেন


0 Comments