
কালাপাহাড় অভিযানের গল্প
মৌলভীবাজার ভ্রমণ
কালাপাহাড়! নামটার মধ্যেই কেমন একটা দানবীয় ভাব আছে। প্রথমবার নামটা শুনতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। গত ২ বছরে নানা মুখ থেকে কালাপাহাড়ের অনেক গল্প শুনেছি আর নিজে কল্পনার মাধ্যমে হারিয়ে গিয়েছি সেই কালাপাহাড়ে। ভরা বর্ষায় প্ল্যানিং করেছিলাম কিন্তু জোঁকের বিভীষিকার কথা চিন্তা করে কেউ রাজি হয়নি যেতে। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্ন দেখলাম কালাপাহাড়ে চড়ার। ঠিক পরেরদিন সকালে এক বড় ভাই বললো যে কালাপাহাড় যাবে তারা সো আমি যাবো কিনা। কিভাবে মিস করবো এই সুযোগ? আব্বু-আম্মুর থেকে ও পারমিশন নিতে বেশি বেগ পেতে হলো নাহ। সবশেষে ২৩/১/২০২০ এ রাত ৮:৩০ টার উপবন এক্সপ্রেসে করে ছুটলাম কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে। রাত ৩ টার দিকে ট্রেন আমাদের কুলাউড়ায় নামিয়ে দিয়ে তার গন্তব্যে ছুটে চললো। কুলাউড়ায় তখন তাপমাত্রা ১১/১২ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস। স্টেশন থেকে পাতা কুড়িয়ে আগুন জ্বালালাম। নাহয় আমাদের গল্পটা ওখানেই শেষ হয়ে যেত। ৬ টা বাজলে আমরা সকালের নাস্তা সেরে ২৫০ টাকা করে সিএনজি নিয়ে রোয়ানা দেই আজগরাবাদ টি স্টেটের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকেই ৫০০ টাকায় গাইড নিয়ে ৮:৩০ আমরা ঢুকে পড়ি কালাপাহাড় ট্রেইলে। তখন ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। শীতে কাঁপতে কাঁপতে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে বেগুনছড়া পুঞ্জীতে যেতে লাগলাম। কুয়াশা যেন আমাদের ঘিরে রেখেছিল পুরো রাস্তাটিতে। বেগুন ছড়া পুঞ্জীতে আসতে সময় লাগলো ৪০ মিনিট। তারপর সেখান থেকে মূল ট্রেইলে ঢুকতে শুরু করলাম। ঝিরির মধ্য দিয়ে হাঁটা লাগলো ৩০-৪০ মিনিট। ঝিরির হিমশীতল পানি তে এতক্ষন পা ডুবিয়ে চলার পরে পা গুলোকে অনুভব করতে পারছিলাম না। তারপর শুরু হলো পাহাড়ি রাস্তা। ৭-৮ টা পাহাড় টপকাতে হবে কালাপাহাড় যেতে। শীতের সময় হওয়ায় আমাদের সাথে জোঁকের দেখা হয় নাই। কিন্তু বর্ষায় এই পাহাড় গুলো একেকটা জোঁকের মিলন মেলায় পরিণত হয়। কিছু দূর যাওয়ার পর নজরে পড়লো হাতির তাজা বিষ্টা মানে তারা আশে পাশেই আছে। কালাপাহাড় উঠার লাস্ট স্টেপটাই একটু কষ্টের। প্রায় ৬০ ডিগ্ৰি খাঁড়া রাস্তা। ঠিক ১০:২০ এ আমরা কালাপাহাড় সামিট করি। কিন্ত তখনই সবার কানে আসলো পাহাড়ের সামনের বাঁশ ঝাড়ে তুলকালাম চলছে। একটু সামনে গেলে দেখা গেল যে হাতির পাল। আমরা আমাদের মতোই চূড়ায় বসে রইলাম তারা চলে গেল। যদিও কালাপাহাড়ের চূড়ায় গাছপালা বেশি থাকায় অপার্থিব সৌন্দর্যের দেখা নাও পেতে পারেন তবুও হাত বাড়ালেই যেন মনে হবে আকাশ কে ছুঁতে পারবেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা ব্যাক করি। সেদিন লেম্বুছড়া পূঞ্জীতে একটি বিয়ে ছিল ফলে আমরা আসার সময় সেদিক দিয়ে ঘুরে আসি।
কালাপাহাড় যেতে হলে বাস/ট্রেনে করে আসতে হবে কুলাউড়ায়। তারপর সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে আজগরাবাগ টি স্টেট। সেখান থেকে গাইড নিয়ে অথবা বেগুন ছড়া পুঞ্জী থেকে গাইড নিয়ে যেতে হবে কালাপাহাড়। আজগরাবাদ টি স্টেটের পর কোনো দোকান নেই ,ঊযা নেওয়ার এখান থেকেই নিতে হবে। ফিরবার সময় বিকাল ৫:৩০ টায় কুলাউড়া থেকে ঢাকার ডিরেক্ট বাস ছেড়ে আসে ভাড়া পরবে ৫০০ টাকা। তাছাড়া ৫ টা বাজে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ও ঢাকা ব্যাক করতে পারবেন। কিন্তু সিট পাওয়া সম্ভব নাহ ট্রেনে তাই বাস ই বেটার।
চূড়ায় অনেক বিরিয়ানি, চিপ্স, বিস্কুট এর প্যাকেট নজরে পড়লো। এইগুলো বহন করে আনা ও কষ্টকর ছিল। তাই আর উপায় না পেয়ে আমরা এইগুলো পুড়িয়ে দেই। পানি দিয়ে ভালোভাবে আগুন নিভিয়ে তারপর চলে আসি। যদিও এতে একটু বায়ু দূষণ হয়েছে। কিন্তু মাটিতে থাকলে তা আরো বড় ধরনের ক্ষতি করতো এইটা। এই বায়ু দূষণ টা ও আমাদের করা হতো নাহ যদি নাহ আমরা এমন একটা জায়গায় ও বিরিয়ানী না নিয়ে যেতাম। তাই দয়া করে কেউ এগুলো ফেলে আসবেন নাহ। কারণ সেখানে কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী নেই যে কিনা এইগুলো পরিষ্কার করবে।
Written Byসাইফুর রহমান রাহুল



0 Comments