
কালাপাহাড় জয়
মৌলভীবাজার ভ্রমণ
কালাপাহাড় সিলেটের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এর উচ্চতা প্রায় ১১০০ ফিট। এটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কারমাধ ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থানীয় খাসিয়াদের বেগুনছড়া পুঞ্জি (ওরা গ্রামকে পুঞ্জি বলে) হয়ে কালাপাহাড় যেতে হয়। বেগুনছড়া পুঞ্জি থেকে স্থানীয়য় গাইড নিয়ে কালাপাহাড় আরোহণ করতে হবে। এজন্য আপনাকে ২+২=৪ ঘন্টা হাটতে হবে। যদিও আমাদের ৬ ঘন্টার মত লেগেছিল।
আছগরাবাদ থেকে আমাদের ট্রেকিং শুরু হয়। এর বিপরীত দিকে চা বাগানের রাস্তা দিয়ে আমরা হাটা শুরু করি।
এবার মূল কথায় আসা যাক। কালাপাহাড় জয়ের জন্য বিগত ০৪/০৫/১৮ তারিখে আমরা ১৮ রওয়ানা হই কুলাউড়া থেকে। কিন্তু প্রবল বর্ষণ, গাইড স্বল্পতা, ট্রেকিং শুরু করতে বিলম্ব ও পূর্ব পরিকল্পনার অভাবে অর্ধেক পথ হতে ফেরত আসি।
দুপাশে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে আমরা হাটতে শুরু করি
যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ চা বাগান
এবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় কালাপাহাড় জয়ের জন্য খুব ভোরে সিলেট থেকে কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সিলেট স্টেশন থেকে ৭ টার কালনী ট্রেনে করে ৮:২০ মিনিটে পৌছে যাই কুলাউড়া স্টেশনে। এবার ১৮ জন থেকে হ্রাস পেয়ে ৩ জন কুলাউড়া থেকে প্রথমে রবিরবাজার।অতঃপর রবিরবাজার থেকে আছগরাবাদ যাই লোকাল সিএনজিতে। সেখান থেকে ৯:৩৫ মিনিটে আছগরাবাদ চা বাগানের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে ধরে ৪০ মিনিট হেটে পৌছে যাই বেগুনছড়া পুঞ্জি।
পথে মিলবে ছোট ছোট খাল ও নদী
এ ধনের সাখ পাবেন ১০ টির মত
বেগুনপুঞ্জির প্রধান লেম্বুদা। কিছু সময় উনার সাথে গল্প করি।
খাসিয়াদের ব্যবহৃত দা
সেখানে আমাদের সাথে দেখা হয় পুঞ্জি প্রধাম লেম্বুদার সাথে।উনার সাথে গল্প করতে করতে ঢাকা থেকে আরও ৬ জন আসে কালাপাহাড় অভিযানে। তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা মোট ৯ জন হাটা শুরু করি বনের ভেতর দিয়ে।তখন ঘড়িতে ১১:০৫ মিনিট।অনেক খাড়া পাহাড় বেয়ে ও জোঁকের কামড় খেয়ে ১:১০ মিনিটে পৌছে যাই কালাপাহাড়ের চূড়ায়। এখানে ২ ঘন্টা লাগলেও আমরা হেটে ছিলাম ১:২০ মিনিটের মত।
লেম্বুদার বাগানে কাচা কমলা
আমাদের সাথে ২ জন ছিল খুবই ধীর গতির।তাদের জন্য ট্রেকিং এ অনেক যাত্রা বিরতি দিতে হয়।কালাপাহাড়ে আমরা মেঘের দেখা পাই ১০ মিনিটের মত। আমরা এখানে ১ ঘন্টা মত ছিলাম।
চা বাগান থেকে আমরা বনের ভেতর ঢুকতেছি
লেম্বুদার কাছ থেকে গাইড নিয়ে কালা পাহাড় অভিযান শুরু
পাহাড়ের একপাশে ভারত অন্য পাশে বাংলাদেশ দেখা যায়।অতঃপর ২:১০ মিনিটের দিকে আমরা অন্য পথ দিয়ে বেগুনছড়া পুঞ্জির উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করি। ২ ঘন্টা বিভিন্ন ঢালু পাহাড় ও ছড়া অতিক্রম করে ৪:১০ মিনিটে আমরা বেগুন ছড়া পুঞ্জিতে পৌছাই। সেখান থেকে গাইডকে রেখে আমরা হেটে আছগরাবাদ পৌছাই।
ঐ দেখা যায় কালাপাহাড়
এভাবে খাড়া পাহাড় উঠতে হয়। যার মধ্যে একটি ছিল প্রায় ৭৫ ডিগ্রি খাড়া
খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠার পথে
যাতায়াত
১. যারা ঢাকা থেকে আসবেন তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হয় ট্রেনে আসা। রাতের উপবন (বুধবার বন্ধ) ৯:৫০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।এ ট্রেন কুলাউড়া ৫ টা পৌছায়। ভাড়া শোভন চেয়ার ২৮০ টাকা।
২.স্টেশন থেকে বের হয়ে মেইন রোডে থেকে লোকাল সিএনজি করে চলে আসবেন রবিরবাজার। ভাড়া জন প্রতি ২০ টাকা।
৩. রবিরবাজার থেকে লোকাল সিএনজিতে আছগরাবাদ জন প্রতি ২০ টাকা।
৪. এবার সিএনজি থেকে নেমে আছগরাবাদ চা বাগানের ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে ৪০ মিনিট হাটলেই বেগুনছড়া পুঞ্জি। হাটার সময় স্থানীয় মানুষকে জিজ্ঞেস করলে রাস্তা দেখিয়ে দিবে।
৫.বেগুনছড়ায় পুঞ্জি প্রধান লেম্বুদার সাথে দেখা করে গাইড নিয়ে ট্রেকিং শুরু করবেন।
কালাপাহাড়ে মেঘের খেলা
পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের নিমন্ত্রন
এই রাস্তা দিয়ে আমরা বাহির হই চা বাগান থেকে
পরামর্শ
১. যত সকাল সম্ভব ট্রেকিং শুরু করবেন। এতে সন্ধ্যা হওয়ার আগে ফিরতে পারবেন।
২.রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।তাই এদিন এড়িয়ে চলুন।
৩.গাইড আগে থেকে ঠিক করে যাবেন। লেম্বুদার(01951649881) সাথে আগে কথা বলে গাইড ঠিক করবেন।
৪.খাসিয়াদের পান, কমলা ও অন্যান্য ফসলে বিনা অনুমতিতে ছিঁড়বেন না।
৫.বর্ষাকালে জোঁক থেকে বাচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে যাবেন।
৬.ট্রেকিং শুরু করার পূর্বে পর্যাপ্ত পানি ও শুকনা খাবার সাথে নিবেন।
বি:দ্র: যেখানেই যাবেন পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হন।পরিবেশে ক্ষতি হয় এমন কিছু ফেলে আসবেন না।
0 Comments