পৃথিবীকে হাতের মুঠোতে আনতে চান???
ভিবিন্ন দেশের ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
একটি সময় ছিল যখন এদেশ থেকে মানুষ বিদেশে যেতেন শুধুমাত্র জীবিকা অর্জনের জন্যে। কিন্তু আজ অনেকেই আছেন যারা কিনা দেশ বিদেশ ঘুরতে উগ্রিব থাকেন শুধুমাত্র প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে অথচ এই দেশ থেকে খুব সহজে উন্নত বিশ্বের দেশ গুলোতে ভিসা পাওয়া যায় না। এটা আমাদের ট্যুরিস্ট ভাই বোনদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমাদের অনেকেই আছেন যারা যেনে না শুনে হাজার হাজার টাকা ফেলেন ভিসার জন্য। তারা আদৌ জানেন না তারা এই দেশ থেকে ভিসা পাওয়ার যোগ্য কিনা ? আর এই সুযোগ নিচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ীরা যারা কিনা বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে পাসপোর্টে পূর্বে আশেপাশের দুই তিনটা দেশের ভিসা থাকলেই উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা এবং ইউরোপের ভিসার জন্য আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কোন কোন ট্রাভেল কোম্পানি আবার ইদানীং যোগ্য দুই একজনের ভিসার কাজ করে তাদের ভিসা পাওয়াকে লাইভে এসে সবার সামনে হাইলাইট করতে থাকেন। এমন একটা ভাব যেন তারাই ভিসা পাওয়ায় দিয়েছেন। আর এই লোভে যোগ্য অযোগ্য সকলে তখন সেদিকে দৌঁড়াতে থাকেন যেন ভিসার মালিক সেই কোম্পানি গুলো। আপনি শুনলে হয়ত অবাক হবেন একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্যে এই প্রসেসিং কিছুই না। আপনার যোগ্যতাতেই আপনি ভিসা পাবেন। আপনার যোগ্যতার সাথে যদি সঠিক ডকুমেন্টস থাকে এবং নিয়ম অনুযায়ী সব জমা দিতে পারেন তাহলে ভিসা নিশ্চিত। এখানে এজেন্ট গুলো শুধুমাত্র আপনার ভিসা ফর্মটি ফিলাপ করেন আর বাকী সব ডকুমেন্টস আপনার কাছে থেকে নিয়ে আপনাকেই ভিসার জন্য দাঁড়াতে হবে। এখানে এজেন্টের কোন ক্ষমতা নেই আপনাকে ভিসা পাওয়ায় দেওয়ার।
আমি নিজে নিজেই যেহেতু কিছু উন্নত দেশের ভিসা পেয়েছি তাই আমাদের দেশের জন্য তাদের কিছু কিছু প্রধান রিকয়েরমেন্ট সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি। অন্য দেশের ট্যুরিস্টদের জন্য খুব ইজি হলেও আমাদের ব্যাপারে তাদের রিকয়েরমেন্ট গুলো অটল। আপনি শুধুমাত্র দুই তিনটা দেশ পূর্বে ঘুরলেই ভিসা পাবেন এটা মোটেও সত্য নয়। উন্নত দেশ গুলোতে ভিসা পাওয়ার প্রধান শর্ত আপনাকে তাদের নিকট ডকুমেন্টসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ভাবে অনেক ভাল আছেন আর আপনি একজন নিয়মিত ট্যুরিস্ট এবং ট্যুর শেষে অবশ্যই যথা সময়ে দেশে ফিরবেন। এই প্রমাণ তারা ঠিকমত না পেলে কোনদিনও আপনি ভিসা পাবেন না।
কিভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে আপনি দেশে ফিরে আসবেন এবং এই প্রমাণের জন্য এ্যম্বাসি একজন ট্যুরিস্টের কোণ কোণ দিক খুব গুরুত্ব দেয় তার কিছু বেসিক দিক নিম্নরুপঃ
- আপনাকে ভাল বেতনের চাকুরীজীবী অথবা ভাল আয়ের ব্যবসায়ী হতে হবে
- চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে অফিস থেকে অফিসের প্যাডে NOC এবং Salary Certificate জমা দিতে হবে
- ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে আপডেট ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং মাসিক আয় দেখাতে হবে
- চাকুরীজীবীর ব্যাংক Salary Account থাকতে হবে এবং ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিস্থানের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে
- আপনার মাসিক আয়ের সাথে ব্যয় এবং ব্যাংকে অবশিষ্ট সেভিংসের একটা মিল থাকতে হবে
- আলাদা একাধিক ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট দেখানো যেতে পারে
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে (দুই দিনের মধ্যে লাখ লাখ টাকা জমা দিলে হবেনা এতে তারা একাউন্ট সাজানো মনে করেন এবং ভাবে আপনি কারো কাছে টাকা ধার করে ভিসার জন্য জমা দিয়েছেন)
- TIN সার্টিফিকেট থাকতে হবে
- দীর্ঘদিনের FDR অথবা সঞ্চয়পত্র থাকতে হবে (ভিসার জন্য নতুন করলে হবেনা)
- যেকোন সম্পদ যেমন নিজের নামে জমি বা ফ্লাটের দলিল (অধিক গ্রহণযোগ্য)
- বছরে এক অথবা দুইবার বিদেশ ভ্রমণ থাকা ভাল ( ভিসার জন্য ১০ দিনের মধ্যে তিনটা দেশ ঘুরলে হবেনা, তাহলে এটি সাজানো মনে হবে)
- বিবাহিতদের জন্য ভিসা পাওয়া অগ্রধিকার, তবে সেক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কেই একসাথে একই সময়ে পূর্বে বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।
- শুধুমাত্র ঘুরার উদ্দেশ্য নিয়ে নয় বরং বিভিন্ন অকেশনের উদ্দেশ্য হাইলাইট করা ভিসার জন্য ভাল
- ইনভাইটেশন অথবা হোটেল বুকিং থাকতে হবে আবার অনেক ক্ষেত্রে ইনভাইটেশন জরুরী ( ইনভাইটেশন লেটার নিয়ম অনুযায়ী লিখতে হবে)
আমি উপরে শুধুমাত্র কিছু বেসিক বিষয় বা ডকুমেন্টের কথা লিখেছি এছাড়া বিভিন্ন দেশের জন্য নিজস্ব বিভিন্ন ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যে দেশেরই ভিসা করুন না কেন সেই দেশের website ভিজিট করে তাদের চেকলিস্ট সংগ্রহ করুন এবং সেই অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট জমা দিন। আর মনে রাখবেন আপনার যেকোন বাংলা ডকুমেন্টস অবশ্যই ইংরেজীতে অনুবাদ সহ তা নোটারী করে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন আপনার ডকুমেন্টস যেন ঝকঝকে এবং ডিসিপ্লিন থাকে। অস্পষ্ট এবং অগোছালো কাগজ তাদের কাছে বিরক্তির কারন হতে পারে। এমনভাবে ডকুমেন্টস গুলো জমা দিবেন যাতে তারা হাতে নিয়ে খুব সহজে সব বুঝতে পারেন। এছাড়া আপনার জমাকৃত সকল তথ্য অবশ্যই সত্য হতে হবে যাতে তারা অনুসন্ধান করলে যেন সঠিক তথ্য পায়। নিজেকে ভিসা পাওয়ার যোগ্য করে আবেদন জমা দিবেন নতুবা অযথা রিফিউজ হয়ে আপনার পাসপোর্টকে নষ্ট করবেন না। কারন কোন দেশে একবার রিফিউজ হলে পরবর্তীতে আপনি যোগ্য হলেও সেই দেশ আর ভিসা দিতে চায়না। তবে আপনাকে আরো একটি কথা মাথায় রাখতে হবে আপনি যদি খুবই যোগ্য কিংবা কোন সুপারস্টারও হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনি ৮০% এর বেশী ভিসা আশা করতে পারবেননা। পরিবেশ পরিস্থিতি আর আপনার কোন প্রকার ভুলের কারনেও রিফিউজ হতে পারেন। আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। চেষ্টা করবো যতটুকু জানি তার উপর উত্তর দিতে।
ধন্যবাদ।
0 Comments