ধূপপানি ঝর্ণা, ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা
বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি
ধূপপানি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি, সুবিশাল উচ্চতা, শুভ্র জলরাশির ঝর্ণা আর ঝর্ণার নিচের গুহার জন্য ট্রেকারদের কাছে এই ঝর্নাটির আবেদন সবসময় অন্যরকম, ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি এবং অনেক উচু থেকে আছড়ে পড়া জলরাশি আপনাকে একরকম পাগল করে দিবে, ঝর্ণার নিচের গুহায় চোখ বন্ধ করে বসলে মনে হবে অন্য কোন জগতে চলে গেছেন । ঝর্ণায় এখন অনেক পানি, যারা যাওয়ার প্ল্যান করছেন তারা খুব তাড়াতাড়ি প্ল্যান করে ফেলুন । গ্রূপ ছাড়া এই ধরণের ট্যুর একেবারেই সম্ভব নয়, তবে গ্রূপ-এ মেম্বার বেশি হলে সবচেয়ে ভালো, গ্রূপ মেম্বার কম হলে খরচের পরিমানটা বেড়ে যায় ….
১ম দিন ও ১ম রাত : কাপ্তাই নেমে হালকা নাস্তা করে কাপ্তাই ঘাট থেকে ট্রলারে ২ ঘন্টায় বিলাইছড়ি (পথে আর্মি চেক পোস্ট পড়বে, আই ডি কার্ড এর ফটোকপি জমা দিয়ে পারমিশন নিতে হবে), সেখানে আগে থেকে ঠিক করা থাকার জায়গায় (রেস্ট হাইজ) ফ্রেশ হয়ে গাইড নিয়ে ন-কাটা ঝর্ণা এবং মুপ্পোছড়া ঝর্ণার উদ্দ্যেশে যাত্রা করবেন, ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন ন-কাটা ঝর্ণায়, এখানে কিছু সময় কাটিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট ট্র্যাকিং করে পৌঁছে যাবেন মুপ্পোছড়া ঝর্ণায় । সময়ের ব্যবহার করতে পারলে আপনি গাছকাটা ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন, সময়ের অভাবে আমরা গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে পারিনি ।
২য় দিন ও ২য় রাত : খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রলারে করে প্রায় ২ ঘন্টায় উলুছড়ি পৌছে যাবেন, রাতে খাওয়ার সময় সকালের নাস্তার অর্ডার দিয়ে রাখবেন, নাস্তা ট্রলারএ করে নিবেন । পথে ২টা আর্মি চেকপোস্ট পড়বে (আগে থেকে সবার আই ডি কার্ড এর কপি একজায়গায় গুছিয়ে রাখবেন) । উলুছড়ি থেকে ছোট ডিঙি নৌকা নিতে হবে, নৌকা আপনাকে যেখানে নামিয়ে দিবে সেখান থেকে আপনার ট্র্যাকিং শুরু, মোটামুটি ট্র্যাকিং জানলে আপনার ১:৪৫-২ ঘন্টার মতো সময় লাগবে কাঙ্খিত ধূপপানি ঝর্ণায় পৌঁছতে । ঝর্ণার কাছে আসার পর আমার অনুভূতি কোনো ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, যাদের সম্ভব আমি বলবো একবার হলেও এই বর্সায় ঘুরে আসুন ….আপনার হাজার বছর মনে থাকবে….ট্রলার রিসার্ভ করা থাকলে দুপুর ১:৩০ টার মধ্যে ধূপপানির মায়া ত্যাগ করে আপনাকে ফিরে আসতে হবে, বিলাইছড়ি পৌছে দুপুরের লাঞ্চ করে আপনাকে ফিরে আসতে হবে কাপ্তাই, বোনাস হিসেবে দেখবেন নীলাভ কাপ্তাই লেক, আর সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলে আপনি সাধারণ কেউ নন ….. কি আর করার নিজেকে অসাধারণ প্রমান করে কাপ্তাই চলে আসলাম।
সতর্কতা:
১) আপনাকে অবশ্যই সময়ের সাথে চলতে হবে। কারন এখানের লোকাল বোট + রাঙ্গামাটি থেকে ফিরতি বাস যারা ঢাকায় যাবেন( রাত ৮:৩০) Sharp time এ চলে।
২) এখানে Teletalk আর Robi ছাড়া অন্য কোন সিমের নেটওয়ার্ক থাকে না।
৩) ধুপপানি হচ্ছে এক বৌদ্ধ বিক্ষুর তীর্থ স্থান। তাই এখানে এসে চিল্লাপাল্লা ও উচ্চবাচ্য করবেন না।
যা সাথে থাকতেই হবে:
১) ভোটার আইডি কার্ড (1st priority)
(অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি)
২) যথেষ্ট পরিমান পলিথিন
৩) ট্রেক করার উপযোগী জুতা/সেন্ডেল
বাজেট:
বাস ভাড়া ঢাকা থেকে (৫৫০*২)= ১১০০ টাকা
কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি বোট (৫৫*২)= ১১০ টাকা
শুক্রবার দুপুরের ও রাতের খাবার + শনিবারে সকালের নাস্তা (৬৫+১১০+৬০)= ২৩৫ টাকা
প্রথম দিন দুইটা (ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণ এর জন্য নৌকা ভাড়া ১০০০ আর পরের দিন ধূপপানি যাইতে ১৮০০ আর ডিংগি নৌকা ৩০০ টাকা! গাইড ৫০০ টাকা!
- ৫ জনের গ্রুপে সর্বমোট প্রায় ১৬০০ টাকার মত পরেছিল মাত্র!
ব্রিঃ দ্রঃ বন্ধুর হেল্প পাইছিলাম অনেক! যেমন আমরা রেস্ট হাউজ এ ফ্রি তে ছিলাম, দুপুরের ভাত ট্রিট ছিল! তাই আপনারা যারা চট্রগ্রাম থেকে যাবেন ১৭০০ টাকা আর ঢাকা থেকে ২৬০০ নিয়ে গেলেই হবে!
মাঝির মোবাইল নং:
01558121103 (নিত্য রঞ্জন)
নৌকা বেশ বড় এবং মাঝি অত্যন্ত আন্তরিক ছিল।
উলুছড়ি থেকে নেয়া গাইড ছিল 'টাইগার'।
[বি.দ্র. আমরা যেদিন ঝর্ণা দেখতে যাই, তার আগের ২/৩ দিন ভালই বৃষ্টি হয়েছে, এমনকি আমাদের ট্রেকিং এর মাঝেও বেশ লম্বা সময় ধরে বৃষ্টি ছিল। তাই রাস্তা পিচ্ছল এবং ঝর্ণায় যথেষ্ট তেজ ছিল। শীতকালে গেলে বৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন। কিন্তু সুন্দর ভিউ মিস করবেন!
সতর্ক : সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না, পরিবেশ নষ্ট করবেন না
Written ByMonjur Hossain Rozin



0 Comments