কম্বোডিয়া ট্যুর ২০১৯
কম্বোডিয়া ভ্রমণ
কম্বোডিয়া হল এশিয়া মহাদেশের ছোট একটি দেশ। ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের মধ্যবর্তী এই দেশটি প্রাগৈতিহাসিক বেশ কিছু স্থানের জন্য বেশ বিখ্যাত। তবে এশিয়ার দেশ হলেও এশিয়দের তুলনায় পশ্চিমা পর্যটকদের ভিড় এখানে তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী। যারা ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ড,মালেশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্ল্যান করছেন তারা হাতে দুই একদিন বাড়তি সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই দেশটি।
ভিসা নিয়ে এখানে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হবেনা। থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে কম্বোডিয়ান দূতাবাসে ৪২০০টাকা ফি দিয়ে সহজেই নিয়ে নিতে পারবেন ভিসা।যেহেতু বাংলাদেশে কম্বোডিয়ার কোন দূতাবাস নেই তাই আগে থেকে ভিসা নেয়ার কোন উপায় নেই। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা দিয়েছে সে দেশের সরকার তাই সেখানে গিয়েও ভিসা নিতে পারবেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট-ধারীরা। ব্যাংকক থেকে ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট অথবা সিঙ্গাপুর থেকে দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটে ১০০০০-১৫০০০ টাকা খরচ পড়বে কম্বোডিয়া যেতে। অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা সম্বলিত ভিয়েতনামে চাইলে বাসে চেপেও যাওয়া যায়। রাজধানী নমপেন থেকে ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর যেতে লাগে ৪-৫ ঘণ্টা এবং ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকার মত। বাস ছাড়াও নদীপথেও বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে যাওয়ার আর আকাশ পথ তো আছেই। একসাথে কয়েকটি দেশ ঘুরার এ এক অন্যতম সহজ উপায়।
কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন শহরটি ছোট হলেও বেশ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার। সে দেশে উবারের মতই গ্র্যাব এবং পাসএপ নামক এপগুলো ব্যাবহার করে চাইলেই শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে আসতে পারবেন স্বল্প খরচে।৪-৫ ডলার দিয়েই বেশ ভালো ভাবে ঘোরা যাবে। আরো আছে টুকটুকি, সামনে মোটর সাইকেল আর পিছনের সাইড তাতে রিকশার মত হুডি। কম খরচে এইটা দিয়েও ঘোরা যাবে দর্শনীয় স্থান গুলো অত্যন্ত কম খরচে, আর শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর সবই মোটামুটি কাছাকাছি হওয়ায় ভাড়া খুব বেশী গুনতে হবেনা আপনাকে। নমপেন শহরটি মেকং নদীর তীরে অবস্থিত এবং শহরের মধ্যখান দিয়েই বয়ে গেছে নদী। নদীর দুই ধারে রয়েছে দেশী বিদেশী বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, পাব ও বার যা কিনা আপনাকে কিছুটা হলেও পাতায়া কিংবা ফুকেটের আনন্দ দেবে।
কই থাকবেন
আমরা ৪ জন ছিলাম ৫ স্টার মানের হোটেল, যার নাম ছিল দ্যা ব্রিজ হোটেল,যার ভাড়া ছিল বাংলাদেশি টাকায় ৪৫০০, ডাবল বেডের রুম উইথ গ্রেট ভিউ। তাও ৪২ তলার উপর সাথে ফ্রিতে এনজয় করতে পারবেন আনলিমিটেড সুইমিংপুল।
একটা বিষয় বলে রাখি যে দেশেই যান না কেন, অবশ্যই বুকিং ডট কম দিয়ে হোটেল বুকিং দিবেন,এতে অনেক কম দামে ভাল মানের হোটেল পাবেন সহজেই,তাছাড়া মেইক মাই ট্রিপ এ্যপ তো আছেই।
কোথায় ঘোরাঘুরি করবেন
৬-৭ ডলার খরচেই এখানে যে কেউ ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন। কম্বোডিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপকতার কারণে সে দেশে ইউএস ডলারই সবজায়গায় ব্যাবহার হয়। এখানকার দর্শনীয় জায়গা গুলোর মধ্যে রয়েছে রয়েল প্যালেস, গণহত্যার স্মৃতি সম্বলিত “কিলিং ফিল্ড” নামক বধ্যভূমি, বীর সৈন্যদের সম্মানে তৈরি ওয়াথ ফেনম নামক স্মৃতি সৌধ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ার এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু নয়নাভিরাম টেম্পল এবং ফুলের বাগান সম্বলিত পার্ক। রাজধানী থেক বেশ দূরে অবস্থিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত এনকর এখানে আপনি খুঁজে পাবেন সে দেশের প্রাচীন সভ্যতার দারুণ সব নিদর্শনগুলো। ৪-৫ হাজার টাকা খরচে ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে সহজেই আপনি যেতে পারবেন সিয়েম রিপ নামক শহরে এবং সেখান থেকে স্পটটিও বেশ কাছে।
খাবার ও শপিং
এখানকার খাবারদাবার বেশ সুস্বাদু অনেকটা থাই খাবারের মতই এবং রাস্তার আশেপাশে খুঁজে পাবেন অনেক ধরনের খাবারের ফুড কোর্ট।
আমি বাঙালি তাই বাংলা খাবার খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম ইন্ডিয়ার রেস্টুরেন্ট, রিভার সাইডের পাশেই, আর তার থেকে আনন্দের বিষয় হল রেস্তোরাঁতে পাওয়া গেল বাংলাদেশের একজন শেফ, খাবার প্রেমীদের জন্য নমপেন শহরটি হতে পারে একটি অনন্য স্থান।
আর যারা কম খরচে প্রচুর শপিং করতে চান তাদের জন্য এখানে রয়েছে নাইট মার্কেট। এখানে আপনি অর্নামেন্টস, জুতা, শো পিস, ঘড়ি থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত সব ব্রান্ডের সবকিছুই পাবেন।
সাবধানতা
১।কম্বোডিয়ার লোকজন খুব বেশী মিশুক স্বভাবের নয়। এখানে ইংরেজির তেমন প্রচলন নেই। তাই চলাচলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অটোরিক্সা এবং স্থানীয় গাইডদের ক্ষেত্রে সাবধান।
২। বিদেশী কাউকে দেখলে সাধারণ দোকানীরা ও ট্যাক্সি ড্রাইভারেরা বেশ দাম হাঁকায়।
৩। এছাড়াও রয়েছে ছিনতাইকারী এবং পকেটমারের আনাগোনা।মোবাইল কিংবা ক্যামেরা ব্যাবহার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে কেউ ফলো করছে কিনা, এ জন্যে সাবধানে থাকা উচিত।
দেশটি যদিও খুব বেশি উন্নয়ন এর ছোয়া লাগেনি তবে এইটাও বলা যাবে না অনুন্নত, বিশাল এবং উন্নত মানের হোটেল আর সাজানো শহর টা অনেক টা পরিস্কার,এ জন্যেই বেদেশি পর্যটকদের আনা ঘোনা ও বেশি। তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না, নিজেকে পরিচিত করুন আপনার ভাল ব্যাবহার এবং কাজের মাধ্যমে, যখনই যেখানে যান না কেন দোয়া পড়ে উঠবেন, সবার সুস্থতা কামনা করে এইবারের মত যাচ্ছি,উৎসাহ পেলে পরের লিখাটা থাকবে মালেশিয়া নিয়ে ইনশাআল্লাহ
বিঃদ্রঃ কয়েকটি হোটেলের পিক ডাওনলোড করা ছিল কারন আমাদের পিক গুলা ছিল হোটেলের সাথে, যেহেতু মানুষ সহ পিক আপলোড দিবেন না, তাই ব্যাটার প্রিভিউ এর জন্যে হোটেল টা কেমন তার জন্যে ছবিগুলো দেয়া হইছে,ধন্যবাদ।
Written Byনাবিদ আঞ্জুম


0 Comments