• Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip
  • Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip

ভুটান-দার্জিলিং: হিমালয়ের নিঃশ্বাসে সাত দিন 7

সাসপেনশন ব্রিজ
A Travel Guide
In
311 views

ভুটান-দার্জিলিং: হিমালয়ের নিঃশ্বাসে সাত দিন

বাই রোডে ভুটান ও দার্জিলিং একসাথে ভ্রমণের বিস্তারিত

18 Jan 2020, 05:01 am
( 3850 words, Reading Time: 19.25 min)

সময়: ৭ দিন ৮ রাত
খরচ: কম-বেশি ১৬০০০ টাকা (ভিসা ফি এবং ট্রাভেল ট্যাক্সসহ)

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইশতিয়াক হোসেন মিরাজ এবং মুহম্মদ সাদমান জহুর।

রুট, খরচের বর্ণনা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং কী করলে/না করলে ভালো হবে এই নিয়ে তথ্যগুলো দিতে চেষ্টা করছি।

ভ্রমণপথ

রাত ১:
ঢাকা থেকে বুড়িমারি জার্নি

দিন ১:
বুড়িমারি-চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার ক্রস
চ্যাংড়াবান্ধা থেকে জয়গাঁ যাওয়া
জয়গাঁ-ফুন্টশোলিং বর্ডার ক্রস
ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু যাওয়া
রাত ২:
থিম্পু থাকা

দিন ২:
থিম্পু শহরে দুইটা মূল আকর্ষণ দেখা (বুদ্ধ পয়েন্ট এবং সিম্পলি ভুটান)
পুনাখা পারমিট যোগাড় করা
দোচুলা পাস হয়ে পুনাখা যাওয়া
পুনাখা জং আর সাসপেনশন ব্রিজ দেখে থিম্পু ফিরে আসা
রাত ৩:
থিম্পু থাকা

দিন ৩:
থিম্পু থেকে চেলেলা পাস আর হা ভ্যালি দেখে পারো আসা
পারো জং দেখা
রাত ৪:
পারো থাকা

দিন ৪:
টাইগার নেস্ট ট্রেক
পারো থেকে ফুন্টশোলিং চলে আসা
রাত ৫:
ফুন্টশোলিং থাকা

দিন ৫:
ফুন্টশোলিং-জয়গাঁ বর্ডার ক্রস
জয়গাঁ থেকে দার্জিলিং যাওয়া
রাত ৬:
দার্জিলিং থাকা

দিন ৬:
ভোর থেকে দার্জিলিং সাইটসিয়িং (দুপুরের মাঝে শেষ)
দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি আসা
রাত ৭:
শিলিগুড়ি থাকা

দিন ৭:
শপিং
দুপুরের আগে বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া
চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারি বর্ডার ক্রস
সন্ধ্যায় বুড়িমারি-ঢাকা বাস ধরা
রাত ৮:
ওভারনাইট জার্নি

পরদিন সকালে ঢাকায় থাকা

ভ্রমণের বিস্তারিত এবং খরচ

(১) যাত্রা শুরুর আগে

i) ট্রানজিট ভিসা ফি: ৮২৪ টাকা

[পোর্ট দিতে হবে চ্যাংড়াবান্ধা-জয়গাঁও কিংবা ফুলবাড়ি-জয়গাঁও।]

ii) বাইরে থেকে ফর্ম ফিল আপ+ হোটেল বুকিং-এর ফটোকপি + অন্যান্য ফটোকপিতে আমাদের কিছু খরচ হয়েছিলো। এখানে খরচ: ২৭৬ টাকা

[নিজে নির্ভুলভাবে ফর্ম ফিল আপ করতে পারলে এখানে কেবল ফটোকপি বাবদ খুবই সামান্য খরচটুক হবে।]

iii) ঢাকা টু বুড়িমারি বাস টিকেট (এসি বাস, SR ট্রাভেলস): ৮৫০ টাকা

[নন এসি বাসের ভাড়া ৬৫০ টাকা। কিন্তু অনেক লম্বা জার্নি, তাই ২০০ টাকা না বাঁচিয়ে এসি বাসই ভালো মনে হয়েছে।]

iv) IVAC-তে জমা দেয়ার জন্য বুড়িমারি টু ঢাকা রিটার্ন দেখাতে ব্ল্যাংক টিকেট: ১০০ টাকা (SR ট্রাভেলস)

[এটা একটা sunk cost। বুড়িমারির টিকেট ওরা ঢাকা থেকে ইস্যু করতে পারে না। কিন্তু যেহেতু ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের সাথে রিটার্ন টিকেট জমা দিতে হয় তাই ১০০ টাকা নিয়ে আমাদের একটা ব্ল্যাংক টিকেট দিয়েছিলো।]

v) ট্রাভেল ট্যাক্স: ৫০০ টাকা

[ঢাকা থেকে দিয়ে যাওয়াই ভালো।]

মোট: ২৫৫০ টাকা

(২) যাত্রা শুরু: ১ জানুয়ারি

ঢাকা থেকে বুড়িমারির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ৮:৩০-টার বাস ৯:১০-এ ছাড়লো।

(৩) প্রথম দিন: ২ জানুয়ারি

বুড়িমারি SR Travels কাউন্টারে পৌঁছুলাম সকাল ৮-টায়। নেমেই ৮ তারিখ সন্ধ্যা ৬:৩০-টার ফিরতি টিকেট কেটে নিলাম।

বর্ডার খুলবে শার্প ৯-টায়। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করে এরপর দুই পাশে ইমিগ্রেশন এবং টাকা/ডলার থেকে রুপি করা ইত্যাদি জরুরি কাজ শেষ করতে ১১:৩০-টা বেজে গেলো। চ্যাংড়াবান্ধা সাইডে স্পিড মানি ১০০ বাংলাদেশি টাকা দিতে হলো। এটাকে ওরা অফিস খরচ বলে চালায়।

এরপর আমরা জয়গাঁও বর্ডার পর্যন্ত ৮ জনের একটা টাটা সুমো ভাড়া করলাম । পার হেড ভাড়া পড়লো ২৮০ রুপি।

জয়গাঁও-এর ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে পৌঁছালাম ২:৪৫-এর দিকে। দেশ থেকেই আইটিনেরারি দিয়ে ভুটানের একজন ড্রাইভার কাম গাইডের সাথে কথা বলে গিয়েছিলাম। ইমিগ্রেশন, পারমিট, টান্সপোর্ট এবং হোটেলের ব্যবস্থা ওরাই করেছে। মিনিমাম খরচে খুবই নির্ভরযোগ্য সার্ভিস পেয়েছি।

ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিলো খুব অল্প। সকালে কিছু খাওয়া হয় নি বলে আমরা দুপুরের খাওয়া শেষ করতে এবং কিছু ড্রাই ফুড কিনে নিতে ১ ঘণ্টার মত সময় নিলাম। তারপর ভুটানে ঢুকলাম এবং ভুটান ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করলাম। এখানে ৩০-৪০ মিনিট সময় নিয়েছে। থিম্পুর পথে রওনা দিতে আমাদের ৫-টা বেজে গেলো। ৮-টার দিকে ছুকা নামের একটা জায়গায় একটা রেস্টুরেন্টে আমরা খেয়ে নিলাম। মালিক বেশ স্পষ্ট উচ্চারণে আমাদের বন্ধু বলে ডাকলেন। আমরা অবাক হলাম। পরে জানলাম তিনি মালয়েশিয়াতে থাকেন, আর তার রুমমেট বাঙালি। রেস্টুরেন্টের ভেতরে হিটারের আশেপাশে হাত-পা গরম করতে করতে আমরা গল্প শুনলাম, খাবার খেলাম এবং গল্প করলাম। পাহাড়ের কোলে উপভোগ্য এক অন্ধকার রাত্রি বেয়ে ১১-টা নাগাদ থিম্পু এসে পৌঁছালাম। রাতে থাকলাম সেখানেই।

কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট:
চ্যাংড়াবান্ধার লোকনাথ কাউন্টার থেকে ১০০ টাকায় ৮২.২৫ রুপি এবং ১ ডলারে ৭২ রুপি করে পেয়েছিলাম।

ভুটানের অপারেটরের নাম এবং ফোন নম্বর:
Lungten Wangdi
+975 17 73 18 55

খরচ:
i) বুড়িমারি টু ঢাকা টিকেট: ৮৫০ টাকা
ii) বর্ডার ফি: ৫০ টাকা
iii) বর্ডারে স্পিড মানি: ১০০ টাকা
iv) রিজার্ভ গাড়িভাড়া: ২৮০ রুপি পার হেড; ২২৫০ রুপি মোট
v) দুপুরের খাওয়া খরচ: ১০০ রুপি (ডমিনোস পিজা)
vi) ড্রাইফুড: ২৫০ রুপি (পরবর্তী ৩-৪ দিনের ব্রেকফাস্ট খরচ)

মোট: ১৭৬৬ টাকা

(৪) দ্বিতীয় দিন: ৩ জানুয়ারি

থিম্পু

ভোরে থিম্পু শহরে হাঁটতে বেরিয়ে পড়লাম। তাপমাত্রা -২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১০-টার দিকে বেরিয়ে প্ল্যানমতো দু'টা স্পট দেখে পারমিট কালেক্ট করে পুনাখার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম।

  • বুদ্ধ পয়েন্টে অনেকটা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। উপর থেকে ভিউ খুব সুন্দর। পার্সোনাল রেটিং ৪.৫/৫।

  • সিম্পলি ভুটান ওদের সংস্কৃতি, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ৩০/৪০ মিনিটের মত একটা গাইডেড টুর। এন্ট্রি ফি ৩০০ রুপি, কিন্তু খুব বেশি ভালো লেগেছিলো। পার্সোনাল রেটিং ৫/৫। আরো বেশি দেয়া গেলে তাই দিতাম।

দোচুলা পাস

অতঃপর পারমিট অফিস থেকে পুনাখা এবং হা ভ্যালি-র পারমিট নিয়ে পুনাখার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারলাম দুপুর ১২-টায়। এখানে জনপ্রতি ১০০ রুপি লাগলো। পথে পড়ে দোচুলা পাস। ভীষণ scenic জায়গা। সেখানে পৌঁছুলাম দুপুর ১:১৫-টার দিকে। আর রাস্তার সৌন্দর্যের কথা বলা স্রেফ বাহুল্য।

পুনাখা জং

দোচুলা পাস থেকে ২:১৫-টার দিকে গাড়িতে উঠে ৩:৩০-টার দিকে পৌঁছে গেলাম পুনাখা জং। এটা ভুটানের সবচেয়ে বড় জং। পৌঁছে ওখানেই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার কিছু খেয়ে ফেলা যায়।

পুনাখা জং-এর ভেতরে ঢোকাটা অনেকেই জোর দিয়ে রিকমেন্ড করে। ঢুকতে ৫০০ রুপি এন্ট্রি ফি এবং ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে। স্টুডেন্ট আইডি দেখালে ২৫০ রুপি। আমার মূল ইচ্ছা ছিলো সাসপেনশন ব্রিজ দেখা, তাই আর এর ভেতরে ঢুকি নি। কিন্তু বাইরে থেকে দেখতেও ভারী সুন্দর।

সাসপেনশন ব্রিজ
পুনাখা জং থেকে ১৫-২০ মিনিট হাঁটলে ভুটানের বিখ্যাত সাসপেনশন ব্রিজ। পো চু নদীর উপর এই লম্বা ঝুলন্ত সেতুর এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে দেখা অনেকেরই বাকেট লিস্টে আছে। এবং absolutely worth it. হা ভ্যালির কাছে এবং ভুটানের আরো কিছু জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরো কিছু সাসপেনশন ব্রিজ আছে। তবে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত এটাই।

বিকেলটা এখানে কাটালাম। সন্ধ্যে নেমে আসা দেখলাম। জং থেকে ব্রিজ পর্যন্ত হাঁটাপথের সৌন্দর্যও অদ্ভুত। বোটানি নিয়ে আগ্রহ থাকলে এই পার্ক আপনার জন্য স্বর্গ। কমলা রঙের বাগানবিলাস ফুল এখানেই প্রথম দেখলাম।

বিকাল ৫:৪০-এর দিকে গাড়িতে উঠলাম থিম্পু ফিরে আসার উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে রাতের খাবার বিরতি। ফেরার পথে জানতাম না আরো কি দারুণ অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে।

ডিনার করে গাড়িতে উঠলাম, গাড়ি চলতে শুরু করলো। একটু পর দোচুলা পাসের কাছাকাছি আসতে দেখি কি যেন পড়ছে গাড়ির কাঁচে। বৃষ্টি কিনা ভাবতে ভাবতে যখন বুঝলাম এটা তুষারপাত, ভালোলাগায় দম আটকে গেলো। জীবনের প্রথম স্নোফল এক্সপেরিয়েন্স করলাম এক ঝলমলে দিনে নয়, বরং রাতে। এত শীতের মাঝেও গাড়ির জানলা খুলে হাত মেলে দিলাম। ক্রমশ তুষারপাতের গতি এবং পরিমাণ বাড়লো। রাস্তা ক্রমশ শ্বেতশুভ্র হয়ে উঠলো। স্নোফলের কারণে রাস্তা আটকে গেলো, গাড়ি জ্যামে পড়ে রইলো। কিন্তু আমাদের ৬ বন্ধুর জন্যই এটা ছিলো জীবনের প্রথম স্নোফল বা স্নো এক্সপেরিয়েন্স; তাই আমরা এর মধ্যেও উপভোগ করলাম। গাড়ি থেকে নেমে স্নোবল বানালাম। এরপর ছোঁড়াছুঁড়ি করাটা তো আপনা থেকে আসে। ৩ ঘণ্টার রাস্তা ৭ ঘণ্টা লাগিয়ে থিম্পু পৌঁছেও মন ভরে রইলো অদেখাকে দেখার এক আশ্চর্য পরিপূর্ণতায়। দোচুলা পাস থেকে থিম্পু ফেরা পর্যন্ত সবকিছুর অভিজ্ঞতা ৫/৫।

খরচ:
i) পারমিট: ১০০ রুপি
ii) সিম্পলি ভুটানে এন্ট্রি ফি: ৩০০ রুপি
iii) লাঞ্চ: ৬৫ রুপি
iv) ডিনার: ১৫০ রুপি

মোট: ৭৪৮ টাকা

(৫) তৃতীয় দিন: ৪ জানুয়ারি

সেদিন যাওয়ার কথা ছিলো চেলেলা পাস এবং হা ভ্যালি। ব্ল্যাক আইসের কারণে পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় যাওয়া হয় নি। বরং সারাদিন পারো শহরে ঘুরে বেড়ালাম। হুট করেই একদিন রিল্যাক্স পেয়ে গেলাম।

বিভিন্ন ধরণের নেটিভ হস্তশিল্প এবং সুভেনিয়র কম দামে পাওয়া যায় এমন একটা জায়গায় গেলাম। শপিং করলাম কেউ কেউ। পারো জং এবং আশেপাশে ঘুরে দেখলাম। এখানে ঢুকতেও এন্ট্রি ফি পার হেড ৩০০ রুপি। সুন্দরের কথা আর বেশি বলতে ইচ্ছে করছে না। র‍্যান্ডমলি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যামেরা সেট করলেই ওয়ালপেপারের মত ছবি আসে।

বিকেলে এবং সন্ধ্যায় পারো শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ালাম। ব্রাইড অফ কাঞ্চনজঙ্ঘা খ্যাত জুমলহারি পর্বতের দেখা পেলাম। ভুটানকে নাকি বলা হয় walking heaven. শহর হেঁটে বেড়াতে ভালোই লাগলো। একটু কমার্শিয়াল কিন্তু বেশ গোছানো শহর। সুন্দর।

চেলেলা পাস বা হা ভ্যালি দেখতে না পারায় আমার ব্যক্তিগত আক্ষেপ তেমন নেই। এই ধরণের ল্যান্ডস্কেপ খুব বেশি ইউনিক মনে হয় নি। মাইন্টেইন ভিউ দোচুলা পাসে পেয়েছি, আর আগের রাতে দারুণ স্নোফল পেয়েছি - এটা আমার জন্য যথেষ্টর চেয়ে বেশি ছিলো। তবে যেহেতু চেলেলা পাস অনেক বিখ্যাত স্পট, যেতে না পারলে অনেকের মন খারাপ হতে পারে। তাই যারা ইচ্ছুক, তারা রাস্তা খোলা আছে কিনা আগে থেকে খোঁজখবর করে যাবেন।

খরচ
i) লাঞ্চ: ১৮০ রুপি
ii) ড্রাইফুড: ১৮২ রুপি

মোট: ৪৪২ টাকা

(৬) চতুর্থ দিন: ৫ জানুয়ারি

এই দিন টাইগার নেস্ট ট্রেক করলাম। গাইডের ভাষ্যমতে নেটিভদের জন্য উঠতে লাগে ২-২.৫ ঘণ্টা। আর নেমে আসতে ১-১:৩০ ঘণ্টা। আমার উঠতে লেগেছিলো ৩:৩০-৩:৪৫ ঘণ্টা। নামতে ১:৪৫ ঘণ্টা। মূল মনেস্ট্রিতে প্রবেশমূল্য ১০০০ রুপি। স্টুডেন্ট আইডি দেখালে ৫০০ রুপি। ওঠার পথে ৫০ রুপি দিয়ে লাঠি ভাড়া পাওয়া যায়। নেয়াটা হাইলি রিকমেন্ডেড। খুব হেল্প করবে।

আমি মনেস্ট্রি পর্যন্ত গিয়েছিলাম কিন্তু ভেতরে যাই নি। বন্ধুদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে মূল মনেস্ট্রি থেকে চারপাশের ইউনিক ভিউ পাওয়া যায়। আর ভুটানের মেইন এট্রাকশন হিসাবে অনেকেই হয়তো যেতে চাইবেন।

টাইগার নেস্ট ট্রেকিং ট্রেইলের ভিউ অসাধারণ। আমার সাজেশন হচ্ছে আপনার খুব বেশি শারীরিক সমস্যা না থাকলে সবটা পথ উঠবেন। মোটামুটি সুস্থ থাকলেও উঠবেন। মাঝপথে ছেড়ে দেবেন না। অনেকবার দোলাচলে ভুগবেন হয়তো। আর পারবেন না ভাবতে পারেন। কিন্তু পারবেন। সময় নেবেন; এই দিন আর কিছু রাখবেন না। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক বেশি সাহায্য করবে।

এখানে দরকারি কথার বাইরে একটু গল্প করি। আমরা ওঠার পথে একটু পরপর জিজ্ঞাসা করছিলাম নেমে আসা মানুষদের যে, আর কতদূর। কেউ বললেন ১ ঘণ্টা, কেউ বললেন ৪৫ মিনিট। সেখান থেকে আরো ৩০ মিনিট হাঁটার পরেও আবার কেউ কেউ বললেন আরো ৪৫ মিনিট। এক পর্যায়ে ভাবলাম আর কোনভাবেই যাবো না। তখন পথে এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক বেশ উদ্যম নিয়ে আমাদের যা বললেন সেটা এভাবে বলা যায়,

"You've already passed the toughest part as you're standing here. It's not very far from here; maybe you'll take 30-45 minutes. If you choose to not go, you may. But when you'll get to stand in front of the monastery, you'll feel ve---ry powerful from inside. It's not exactly about the spiritual feeling, but a great positive feeling about yourself and your ability."

এরপর আর একবারও মনে হয় নি যে, থাক উঠবো না। কষ্ট গায়ে কম লেগেছে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে উঠে গেছি। নামার পথে একটা বেঞ্চে বসে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ওভারকোট তুষারে ভরে যেতে দেখার অনুভূতি ভীষণ মোলায়েম এবং সুন্দর।

ভুটানে গেলে টাইগার নেস্ট ট্রেক না করে ফিরবেন না।

সেদিন টাইগার নেস্ট ট্রেক শেষে আমাদের ফুন্টশোলিং চলে আসার কথা। মাঝপথে পারো এয়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ডিং দেখতে দাঁড়ানো এবং খাওয়ার বিরতি। গেদু নামের একটা জায়গার কাছাকাছি আসা পর্যন্ত জার্নির অভিজ্ঞতা অদ্ভুত। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি ভয়াবহ নিস্তব্ধ এক সাদা পাহাড়ের চূড়ায় জোছনা ঠিকরে পড়ছে। ওই জিনিসটার কোন ছবি হয় না। ওই বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়চূড়ায় এমন হিমশীতল রাতে জোছনার মাঝে একদিন গিয়ে দাঁড়াতে পারলে এক জীবনে আর তেমন কিছু নিয়ে আক্ষেপ থাকবে না - এমন বোধ হয়। এমন অদ্ভুত, গম্ভীর, ভয়াবহ সুন্দর।

রাতের পরের অংশটা বেশ কষ্টের ছিলো। এর বিবরণ লিখছি।

খরচ
i) লাঠি রেন্ট: ৫০ রুপি
ii) খাবার খরচ: ২০০ রুপি

মোট: ৩১৩ টাকা

(৭) পঞ্চম দিন: ৬ জানুয়ারি

আগেরদিন সারারাত গাড়িতে আটকে ছিলাম। গেদুতে ভারী স্নোফল হওয়ায় ফুন্টশোলিং পৌঁছাতে আগের দিন রাত ১১-টার বদলে বেজে গেলো পরদিন, অর্থাৎ ৬ তারিখ দুপুর ১২:৩০-টা। কষ্ট হয়েছে অনেক। এই সময়ে ভুটান এলে এটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখানে এই ৪ দিনের গাড়িভাড়া এবং হোটেল খরচ বাবদ সব টাকাপয়সার হিসাব মেটালাম। পর্যায়ক্রমে ভুটান এবং ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশনের ফর্মালিটি শেষ করলাম।

এই পর্যন্ত আমরা ছিলাম ৭ জন। এরপর ১ জন আলাদা হয়ে যাওয়ায় বাকি পথ আমরা ৬ জন ছিলাম।

দেরি হয়ে যাওয়ায় সকালে শিলিগুড়ির বাস ধরে পরে সেখান থেকে দার্জিলিং যাবার পরিকল্পনা বাদ দিতে হলো। বরং অনেক দর কষাকষি করে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসের কাছে সুমো স্ট্যান্ড থেকে ৫১০০ রুপিতে রিজার্ভ গাড়ি নিলাম সরাসরি দার্জিলিং পর্যন্ত। মেইন ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে সুমো স্ট্যান্ডের অটো ভাড়া পার হেড ১০ রুপি। Ertiga গাড়ি পেলাম, ৬ জনের জন্য খুবই ভালো গাড়ি। গত ২৪ ঘণ্টার অনিশ্চয়তা এবং কষ্টের পর এই জার্নিটা আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন ছিলো। ৩-টায় জয়গাঁ থেকে রওনা দিয়ে মাঝে খাবারের বিরতি নিয়ে দার্জিলিং পৌঁছালাম ৯:৩০-টায়। দার্জিলিং নিয়ে সবকিছু পরের পর্বে লিখবো।

ভুটানের অপারেটরের সার্ভিস ডিটেইল:

i) আমাদের গাড়ি ছিলো ৭ সিটের মাহিন্দ্র বলেরো। কমফোর্ট রেটিং ৪/৫।

ii) আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড ছিলো খুবই ঠাণ্ডা মাথার, সৎ এবং সময়ানুবর্তী একজন তরুণ। আমাদেরই কাছাকাছি বয়েসী। কম কথা বলে, কিন্তু দরকারি প্রতিটা ইনফরমেশন সময়মতো দিয়েছে।

iii) থিম্পুতে ২ রাত ছিলাম থ্রি স্টার হোটেল আমা'স স্যুটস-এ। রেটিং ৫/৫। খুবই আরামদায়ক, পরিষ্কার এবং ভালো ফ্যাসিলিটি।

iv) পারোতে ১ রাত ছিলাম হোটেল পারো-তে। রেটিং ৩.৫/৫। চলে আর কি। পরিষ্কার, তবে ফ্যাসিলিটি কম পেয়েছি। ওয়াশরুমে inbuilt geaser ছিলো না, portable geaser দিয়েছিলো। ব্যবহার করা অসুবিধাজনক। একটা রাতই থাকবো, তাই বেশি গা করি নি।

v) ফুন্টশোলিং-এ হোটেলে তো রাতে থাকতেই পারি নি, কিন্তু হোটেল রিজার্ভ করাই ছিলো। যেহেতু আমরা কখন পৌঁছাবো এর কোন নিশ্চয়তা ছিলো না তাই ক্যান্সেল করা হয় নি। এই চার্জটা আমাদের অপচয় হয়েছে। এর জন্য অবশ্য অপারেটরকে দোষ দেয়া যায় না। স্রেফ আমাদের দুর্ভাগ্য।

vi) হোটেলের হিটার বাবদ খরচ পার রুম পার নাইট ২০০ রুপি। ৩০০ রুপি চায়, দরদাম করে এর নিচে নামে না। এটা ব্যক্তিগত খরচ, যদি প্রয়োজন মনে হয়, সেক্ষেত্রে হোটেলের সাথে কথা বলে ঠিক করতে হয়। অপারেটরের ভূমিকা নেই।

vii) ৭ জন পার হেড ৫৩০০ রুপি করে দিয়েছি। মোট তাহলে পড়লো ৩৭১০০ রুপি। ভুটানে ঢোকার সময় ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন থেকে পিক করা থেকে শুরু করে ভুটান থেকে বের হয়ে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন শেষ করে জয়গাঁ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত গাড়িভাড়া এবং হোটেলভাড়া এর অন্তর্ভুক্ত। সার্ভিসে আমরা সবাই বিনীতভাবে সন্তুষ্ট।

কষ্ট যা হয়েছে সেটা জার্নির অংশ। তবে পরিবার পরিজন, বয়স্ক এবং শিশু সদস্য নিয়ে স্নোফলের কারণে বিপদে পড়তে পারেন বলে এ সময় ফ্যামিলি ট্রিপ এড়িয়ে চলতে সাজেশন দিতে পারি।

খরচ:
i) ৪ দিনের গাড়ি ও হোটেল ভাড়া: ৫৩০০ রুপি
ii) রিজার্ভ গাড়িভাড়া: পার হেড ৮৫০ রুপি
iii) খাওয়া খরচ: ২০০ রুপি
iv) ইন্ডিয়ান সিমে রিচার্জ: ১০০ রুপি

মোট: ৭৮৪৫ টাকা

(৮) ষষ্ঠ দিন: ৭ জানুয়ারি

আগের দিন রাত ১০:১৫-টার দিকে রিজার্ভ গাড়ির ড্রাইভারের লিংক নিয়েই হোটেল ঠিক করে হোটেলে উঠলাম। এদিন ভোর ৪-টা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে মিক্সড পয়েন্ট ট্রিপে ঘুরে দেখলাম দুপুর ১-টা পর্যন্ত। কোন ঋতুতে যাচ্ছেন এবং সূর্যোদয় কখন হবে এর উপর নির্ভর করে সূর্যোদয়ের আগে হাতে ২ ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হবেন যাতে মিস না করেন।

আমরা আগের দিন রাতেই হোটেলে উঠে পরে বের হয়ে পরদিনের রিজার্ভ গাড়ি ঠিক করেছিলাম। হোটেলের লোকজন গাড়িভাড়া অনেক বেশি চাইছিলো, প্লাস তারা বাতাসিয়া লুপ এবং ঘুম স্টেশনের সাইডটা দেখাতে চাইছিলো না। তাই আমরা বের হয়ে সব স্পট দেখানোর জন্যই কথা বলে টাটা সুমো গাড়ি ভাড়া করি ২৪০০ রুপি দিয়ে। পরে ভাড়া মেটানোর সময় ড্রাইভার ৫০ টাকা বেশি চেয়ে নেন। সব মিলিয়ে পার হেড ৪১০ রুপি পড়ে।

আপনারা হোটেলের লোকজনের থেকে গাড়িভাড়া করবেন না, একটু কষ্ট করে নিজেরা গাড়ি ভাড়া করবেন যদি খরচ কমাতে চান। উল্লেখ্য যে, আমরা ভোরে বের হওয়ার সময়ই একেবারে হোটেলে চেক আউট করে বের হয়েছিলাম।

ড্রাইভারের নম্বর: +918207215557
নাম জানি না, একজন নেপালি গোর্খা ড্রাইভার।
ভালোই ছিলেন, সব ঘুরে দেখানোর মানসিকতা আছে।

হোটেলের নাম: হোটেল রিনডেন
লোকেশন: কাকঝোড়া, বিগ বাজারের অপোজিটে, মল রোড থেকে ৫ মিনিট
ভাড়া: পার হেড ৩০০ রুপি
রেটিং: ২.৫/৫। জাস্ট বেসিক, গরম পানি পেয়েছি, পরিচ্ছন্নতা মোটামুটি। ৪-৫ ঘণ্টা স্টে করার জন্য এর চেয়ে বেশি খরচা করার ইচ্ছে ছিলো না।

টাইগার হিল

ভোরে উঠে দেখতে গেলাম দার্জিলিং-এর ক্ল্যাসিক টাইগার হিল সানরাইজ অবজারভেটরি। মূল টাউন থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। ভোরের প্রথম সূর্যরশ্মি কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর যখন পড়ে, তখন যেই সোনালি রূপটা নেয় - এটাই এর মূল আকর্ষণ। ভীষণ ম্যাগনিফিশেন্ট। টাইগার হিলের রেটিং ৩.৫/৫, কাঞ্চনজঙ্ঘার এই রূপের রেটিং ৫/৫। বের হওয়ার সময় গাড়ি পার্কিং ফি পার হেড ২০ রুপি নিলো।

বাতাসিয়া লুপ

টাইগার হিল থেকে ৭:৩০-টায় বের হয়ে চলে এলাম বাতাসিয়া লুপ। গোর্খা সৈনিকদের স্মরণে সাজানো গোছানো সুন্দর মেমোরিয়াল। এন্ট্রি ফি ২০ রুপি। এখানে ঢোকার মুখে স্ট্রিট ফুড আর চা দু'টাই ট্রাই করবেন। এখানে দার্জিলিং-এর ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি তোলা যায়। পার পার্সন ড্রেস রেন্ট ৫০ রুপি। এটা আরো বিভিন্ন জায়গায়ই এভেইলেবল হওয়ার কথা তবে ছবি তুললে বাতাসিয়া লুপ থেকে ব্যাকড্রপে কাঞ্চনজঙ্ঘার চমৎকার ভিউ আসে। আর এই জামা পরার মূল উদ্দেশ্যই যেহেতু ছবি তোলা, তাই এই জায়গাটাই ভালো হবে।

উল্লেখ্য যে, টাইগার হিল এবং বাতাসিয়া লুপ দুই জায়গা থেকেই টেলিস্কোপে পার পার্সন ৪০ রুপি দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং আশেপাশের ক্লোজ ভিউ দেখা যায়। কারো ইচ্ছা থাকলে এটা বাতাসিয়া লুপে এসে দেখবেন। টাইগার হিল থেকে তেমন সুন্দর কিছু দেখতে পাবেন না। জিনিসটা আমার খুব ভালো লেগেছে। চেষ্টা করতে পারেন।

পথেই দেখে নিলাম ভারতের highest altitude- এ অবস্থিত রেলস্টেশন: ঘুম স্টেশন।

ডালি মনেস্ট্রি

এটা দার্জিলিং-এর সবচেয়ে বড় বুদ্ধিস্ট মনেস্ট্রি। ৩০-৩৫ মিনিট সময় কাটিয়ে এলাম। সুন্দর। করিডোর থেকে আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা সেঁটে থাকতে দেখা যায়। অদ্ভুত। ভেতরে একটা ক্যাফে আছে; আধ্যাত্মিকতা এবং আধুনিকতার চমৎকার সম্মিলন। ক্যাফেতে বসে আছি সময় শুনতে পেলাম ডিজেল ইঞ্জিনের টয় ট্রেনের শব্দ। ছুটে গেলাম করিডোরে, যেন শৈশবের অনুভূতি। দার্জিলিং এসে ট্রেনের দেখা না পেলে কীভাবে হয়! স্টিম ইঞ্জিনের দেখা পরে দার্জিলিং স্টেশনে পেয়েছিলাম।

দার্জিলিং জু+ হিমালয় মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট+ বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম

তিনটা একই প্রাঙ্গনে; এন্ট্রি ফি তিনটার একসাথে ৬০ রুপি। এই চিড়িয়াখানা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারপ্রাপ্ত। অনেক সুলভ ও বিরল প্রজাতির চিত্তাকর্ষক প্রানীর সমাহার। রেটিং ৫/৫।

হিমালয় মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের যে মিউজিয়াম - সেটার ভেতরে ঢুকে দেখে ভীষণ চমৎকৃত হয়ে গেলাম। এ কোন অচেনা জীবনের ছবি, যার সাথে সমতলের সাধারণ ছাপোষা মানুষের কোন যোগাযোগ নেই। সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না দেখে বের হতে পারলাম না। রেটিং ৫/৫।

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামটায় আমি ঢুকি নি, যদিও টিকেট একসাথেই ছিলো। আমার বন্ধুদের ভাষ্যমতে বেশ ভালো। তবে মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিউজিয়ামের মত ভালো না। তাই দেখতে চাইলে এটা আগে দেখবেন, ওটা পরে।

এখানে আমরা ১:৪৫ ঘণ্টার মত সময় কাটালাম। দার্জিলিং-এর সাধারণ সৌন্দর্যের বাইরে স্পট হিসাবে এটাই আমাদের সবচেয়ে চমৎকার লাগলো।

জাপানিজ বুদ্ধিস্ট টেম্পল+ পিস প্যাগোডা

এখানে আমরা ২৫-৩০ মিনিট সময় কাটালাম। শান্তিময় পরিবেশ। টেম্পলের ভেতর ঢোকা যায়। কেউ ছিলো না, একদম নীরব। প্যাগোডার ভেতরেও যাওয়া যায়। রেটিং ৪.৫/৫।

যেখানে যাই নি
ভুটান ঘুরে এসে রক গার্ডেন বা হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট তেমন আকর্ষণীয় মনে হয় নি, একইসাথে আমাদের সময় কনস্ট্রেইন্ট ছিলো- তাই আমরা সেদিকে যাই নি। খুব সাধারণ টুরিস্ট স্পট মনে হয়েছে। সাধারণত মানুষ সেখানে যায় এবং এই সব মিলিয়ে সাইটসিয়িং বিকাল ৪-টার মাঝে শেষ হয়।

যাইহোক, এরপরে আমরা লাঞ্চ করি "মহাকাল রেস্টুরেন্ট"-এ। ১৯০ রুপিতে দারুণ স্বাদের ভরপেট ভাত, তরকারি, ডাল, সবজি, চাটনিসহ থালি খেয়ে সবাই খুশি হয়ে বের হই শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো বলে। বিখ্যাত কেভেন্টার্সে ঢুকেছিলাম, বসে আসার সময় পাই নি। তাছাড়া যার জন্য এর এত নাম, সেই টেরেস থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউও তখন একেবারেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো না মেঘের কারণে।

এরপর ১৫০০ রুপিতে আমরা একটা টাটা সুমো রিজার্ভ করে শিলিগুড়ি চলে আসি। এত কমে সাধারণত রিজার্ভ পাওয়া যায় না। আমরা এভাবে নেগোশিয়েট করি যে - এমনিতে তো পার হেড ১৫০ রুপি করে শেয়ার্ড গাড়ি হিসাবে ১০ জন নিয়ে শিলিগুড়ি যাওয়া হতো। মোট ১৫০০ রুপি পাওয়া যেতো। তো আমরা ৬ জন ২৫০ রুপি করে দিয়ে সিটগুলি নিয়ে নিতে চাচ্ছি যাতে আমাদের কষ্ট করে বসতে না হয়। ১৫০০ রুপিই পড়লো। যেই গাড়ির ড্রাইভারের সাথে সাইটসিয়িং করেছি তার মাধ্যমেই এই গাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ হওয়ায় এই ভাড়ায় রিজার্ভ রাজি করাতে পারি এবং গাড়ি আমাদেরকে শিলিগুড়িতে রেগুলার দার্জিলিং-এর শেয়ার্ড সুমো গাড়ি যেখানে থামে, সেখানে নামিয়ে দিয়ে যায়।

আমরা রওনা দেই ২:৩০ টা নাগাদ, মাঝে অল্প বিরতি দিয়ে দিয়ে পৌঁছাই ৫:৪৫-এর দিকে। পাহাড়ি পথ সবসময়ই সুন্দর। তবে ভুটানের পাহাড়ি পথে একরকম গাম্ভীর্য, একরকম ভীতির ব্যাপার আছে। কেমন ভয়ংকর নীরব। দার্জিলিং-কার্শিয়ং-শিলিগুড়ি এই পথটা বরঞ্চ সজলা, বর্ণিল হাসিখুশি রকমের। উঁচু পাহাড়ি পথ থেকে নিচে নেমে আসার বাঁকগুলি দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। পার্টিকুলারলি কার্শিয়ং পর্যন্ত এসে ঠিক মেঘের সমান উচ্চতায় এই শীতের দেশেও দেশের আপন ও পরিচিত বৃষ্টির মত ছোঁয়া অনুভব করলাম মনে হলো।

কার্শিয়ং

কার্শিয়ং খুব সুন্দর। গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও এই পথটুকু জেগে থাকবেন। আমি এবং ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির ৫ জনকে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে খুবই দুঃখ পেয়েছি এই সুন্দর একসাথে দেখতে না পারায়; তাই আপনাদের জন্য অগ্রিম সতর্কতা।

সমতলে নেমে উপরে পাহাড়ের গায়ে ঘরবাড়ির টিমটিমে আলো জ্বলতে দেখার অনুভূতি কেমন যেন। একটু আগেই যেই পৃথিবীতে ছিলাম, তাকে বিদায় দিচ্ছি এমন লাগলো।

যাহোক, এরপর পৌঁছে শিলিগুড়ি সুমোস্ট্যান্ডে নেমে পার পার্সন ১৫ রুপি দিয়ে রিজার্ভ অটো নিয়ে আমরা চলে যাই বিধান মার্কেটের কাছে এমন জায়গা পর্যন্ত যার আশেপাশে হোটেল পাওয়া যাবে। নেমে দেখেশুনে দরদাম করে ডাবল রুম ৯৯০ রুপিতে একটা চমৎকার হোটেল পেয়ে যাই।

হোটেলের নাম: Sevoke Valley Residency
ঠিকানা: ক্ষুদিরামপল্লী, বিধান মার্কেটের কাছে, মেডিসিন গলি
ফোন নম্বর: +919800003834
রেটিং: ৪.৮/৫ (পরিচ্ছন্নতা, ফ্যাসিলিটি, কমফোর্ট, ব্যবহার সবই ভালো।)

ট্রানজিট ভিসায় যেহেতু ভুটান ক্রস করে হাতে মাত্র ৩ দিন সময় থাকে আর এর মধ্যে ২ দিন চলে যাচ্ছে, তাই আমরা কোন ধরণের রিস্ক নিতে আগ্রহী ছিলাম না। এখানে অনেকে বলতে পারেন ৩ দিন মানে ৭২ ঘণ্টা, সেটার নিয়ম ক্লিয়ারলি জানা নেই। কিন্ত মূল কথা হচ্ছে বিদেশ বিভুঁইয়ে এসব নিয়ে ইমিগ্রেশনে আমরা এক বিন্দুও ঝামেলা না রাখার জন্য সেদিনই শিলিগুড়ি চলে আসি। এটা যে কতটা ভালো প্ল্যান ছিলো তা টের পাই যখন শিলিগুড়িতে হোটেলে চেক ইন করে রাত ৮:৩০-টার দিকে কিছু শপিং-এ বের হয়ে অটোর ড্রাইভার মারফত জানতে পারি পরদিন ৮ জানুয়ারি গোটা জেলায় হরতাল, কোন গাড়ি বের করবে না।

খরচ:

i) হোটেল ভাড়া: ৩০০ রুপি পার হেড (দুইটা রুম মোট ১৮০০ রুপি)
ii) পাসপোর্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হোটেলের লোকজন একটা এক্সট্রা ফি নিলো: ৫০ রুপি
iii) এন্ট্রি ফি: ৮০ রুপি
iv) ড্রেস ভাড়া আর টেলিস্কোপ: ৯০ রুপি
v) স্ট্রিটফুড: ৬০ রুপি
vi) লাঞ্চ: ১০০ রুপি (একটা থালি দুইজন মিলে পেট ভরেই খেয়েছি)
vii) রিজার্ভ সাইটসিয়িং গাড়িভাড়া: ৪১০ রুপি
viii) দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি আসার ভাড়া: ২৫০ রুপি
ix) অটো ভাড়া: ১৫ রুপি
x) হোটেল ভাড়া: ৫০০ রুপি পার পার্সন
xi) ডিনার: ১৩৫ রুপি (KFC)

মোট: ২৪১৭ টাকা

(৯) সপ্তম দিন: ৮ জানুয়ারি

আগের রাতে আমরা একজন অটোওয়ালা মারফত বিভিন্ন ড্রাইভারের খোঁজ নিয়ে তোড়জোর করে গাড়ি খোঁজার চেষ্টা করি। আমাদের প্রাইমারি প্ল্যান ছিলো পরদিন সকালে অল্প শপিং করে ১০:৩০/১১ টার মধ্যে চ্যাংড়াবান্ধার উদ্দেশ্যে বাসে রওনা দিয়ে দেয়া যাতে ১:৩০/২-টার মাঝে বর্ডার ক্রস করে ফেলতে পারি। বর্ডার ৫-টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তু ওই যে, পূর্বসতর্কতা। এখন এই সিচুয়েশনে আমরা ১:৩০/২ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করে, এই ড্রাইভার সেই ড্রাইভারের সাথে কথা বলে বিশাল দাম দিয়ে একটা Ertiga গাড়ি পাই যেটা ভোর ৬-টায় কোন ঝামেলা শুরু হওয়ার আগে আমাদের পৌঁছে দেবে। কিন্তু ভোরে সেই গাড়িটা আসে নি। ধোঁকা খেলাম, কিন্তু আমাদের তো ইমার্জেন্সি, যে কোন মূল্যে আজ স্ট্রাইক পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে রওনা দিয়ে বর্ডারে পৌঁছে থাকতে হবে। তাই আমরা মাথা ঠাণ্ডা করে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে হেঁটে হেঁটে চলে যাই সরকারি বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে সৌভাগ্যবশত দরদাম করে ১৯০০ রুপিতে একটা ছোট মাইক্রোবাস পেয়ে যাই। এছাড়া NBSTC-র কুচবিহারের বাসও চলতো বলে জানি। ৬:৩০-টায় রওনা দিয়ে ৮:৩০-টার মাঝে বর্ডারে পৌঁছে যাই। এদিকের ফর্মালিটি শেষ করে বর্ডারের একটা দোকান থেকে চিপস- চকলেট- বিস্কিট- সাবান ইত্যাদি কিনে দেশের সাইডে চলে যাই। কাজ শেষ করি।

ওখানে ফ্যাসিলিটি ছিলো আমাদের কিছু; তাই সন্ধ্যা ৬:১৫-টার বাস ধরার মাঝে অপেক্ষমান সময়ে বিনা খরচে ঘুরে ফেলি তিস্তা ব্যারেজ আর পাটগ্রামের তিন বিঘা করিডোর।

তিন বিঘা করিডোরের এক্সপেরিয়েন্স খুবই আমোদপূর্ণ। একটা গেইট দিয়ে ভারতে ঢুকলাম, সামনে এগিয়ে আরেক গেইট দিয়ে বের হয়ে আবার বাংলাদেশে পা ফেললাম। আর্টসেলের অনিকেত প্রান্তরের মত ব্যাপারস্যাপার। ভূমি নিয়ে, মানচিত্র নিয়ে মানবসমাজের কি হাস্যকর মজার মজার কাজকর্ম।

তিস্তা ব্যারেজ একটা সাধারণ ল্যান্ডস্কেপের সুন্দর জায়গা। অনেক ফটোজেনিক।

৭ দিন পাহাড়ে- পর্বতে- তুষারে- হিমশীতল ঠাণ্ডায় থেকে দেশের এই সমতল সবুজ ভূমিতে, সমতলের নদীর ধারে কেমন নিরাপদ আর গা এলিয়ে দেয়ার মত ফিল হচ্ছিলো তা বলা বাহুল্য।

এরপর রাতের বাস ধরে এক ঘুমে সোজা ঢাকায় এসে পৌঁছানো।

খরচ:

i) শিলিগুড়ি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা ভাড়া: ৩২০ রুপি
ii) চ্যাংড়াবান্ধা সাইডে স্পিড মানি: ১০০ টাকা
iii) খাবার খরচ: ২৫০ টাকা

মোট: ৬৪০ টাকা

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার মোট খরচ ১৬৭৩০ টাকা। আবহাওয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিজনিত কারণ ছাড়া বেশ আরামেই ঘুরেছি। অনেক বেশি চেপে চলতে হয় নি। এর মাঝে বেশ ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনের কারণে খরচ হয়েছে। সেসবের বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করছি।

খরচ কমানোর খাত

- ভিসা করানোর পুরো প্রসেস নিজে করতে পারলে প্রায় ২৫০ টাকা বাঁচবে।

- জয়গাঁ থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত রিজার্ভে আসতে হওয়া (সাধারণত জয়গাঁ-শিলিগুড়ি বাসে ১০০ রুপি, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং শেয়ার্ড গাড়িতে ২০০ রুপি = ৩০০ রুপির বাজেটেই হয়। স্নোফলের কারণে আমাদের টাইমিং উল্টাপাল্টা হয়ে যাওয়ায় এখানে ৫৫০ রুপি বেশি খরচ হয়েছে।)

- দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত শেয়ার্ড জিপের ভাড়া ১৫০/১৮০/২০০ রুপি। যা হাঁকায়। আমরা এক্সট্রা সিটের ভাড়া দেয়ায় ৫০ রুপি বেশি খরচ হয়েছে।

- শিলিগুড়ি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার আসতে সাধারণভাবে ১৫০-২০০ রুপির বেশি খরচ হওয়ার কোন কারণ নেই। স্থানীয় যে কারো কাছে শুনে বাস বা শেয়ার্ড গাড়ি নেয়া যায়। এখানে আমাদের ১২০ রুপি বেশি খরচ হয়েছে।

অর্থাৎ প্রায় ৭২০ রুপি বা ৮৮০ টাকার মত একটু বেশি কমফোর্টের জন্য বা ইমার্জেন্সি হিসাবে খরচ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আপনি এইসব জায়গায় ইজিলি খরচ কমাতে পারবেন।
- নন এসি বাস নিলে আরো ২০০+২০০=৪০০ টাকা খরচ কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
- দার্জিলিং আরো আগে পৌঁছাতে পারলে সাইটসিয়িং-এর গাড়িভাড়া আরো দর কষাকষি করে কমাতে পারবেন।

খাবারের খরচ কমানো
খাবারের ব্যাপারে আমাদের স্ট্র‍্যাটেজি ছিলো:

* ড্রাই ফুড, পাউরুটি, চিজ, আমুল মিল্কের ছোট প্যাকেট একবারে ৩-৪ দিনের জন্য করে কিনে নেয়া। ব্রেকফাস্টের জন্য কম খরচে হেলদি ব্যবস্থা হয়ে গেলো যাতে দুর্বল না বোধ হয়।

* একবেলা পেট ভরে ভালো খাওয়া যাতে মন ভালো থাকে। আরেক বেলা কোনমতে চালিয়ে দেয়া।

* ভুটানে নতুন খাবার ট্রাই করে জিতেছে খুব কম মানুষ। প্রতিদিন নতুন কিছু চেষ্টা করতে যাই নি। দেখেশুনে একদিন ভালো কোন একটা চেষ্টা করাই যথেষ্ট মনে হয়।

এই তো। ভুটান ঘুরে এসে দার্জিলিং ভালো লাগবে না, এই মিথের সাথে আমরা কোনভাবেই একমত হতে পারি নি। পরিষ্কার আকাশ, ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, ক্ল্যাসিক হিল স্টেশন - সব ঘিঞ্জি হয়েও কেমন মায়াময়, আকর্ষণীয়। যারা এই রুটে বেড়াতে যেতে চান, তাদের জন্য শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি।


[ভুটানে পথের পাশে বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ডে লেখা: Please don't litter. Littering is an offence. আমরাও আমাদের পপুলার টুরিস্ট স্পটগুলিতে এমন কিছু করতে পারি এবং নিজেরা মেনে চলতে পারি। বেড়াতে গিয়ে পরিবেশ নোংরা না করা দায়িত্বশীল ভ্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ।]


লেখক:

সৈয়দা তাসমিয়া মার্জান

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Written Byসৈয়দা তাসমিয়া মার্জান

#ভুটান_ভ্রমন
  • Share
  • Tweet
  • Share

You Might Also Like...

হাজারিখীল
সোনাইছড়ি ট্রেইল
বারৈয়াঢালা আপস্ট্রিম ট্রেইল ~ পর্ব ১
বারৈয়াঢালা আপস্ট্রিম ট্রেইল ~ পর্ব ২

Leave a Reply

By posting comment you will be registered as a user. You can log in by this credential in the future.
Or, fill the comment and register with social network

0 Comments

  • Share
  • Tweet
  • Share

DURBEEN TRAVEL & TOURISM
  • Home
  • About
  • Contact
support@durbeentravel.com

Copyright © 2018 by Shunno-ek Technology. All Rights Reserved.
  • Log in

Sign In

Chose One of the Following Methods.

With Facebook
Or

Sign in Using Your Email Address

Forgot Password?
Don't have an account? Sign up Now