বান্দরবান ভ্রমণ
বান্দরবান
তিন পর্বের রিভিউ এর প্রথম পর্ব
সংক্ষেপে ক্রমান্বয়ে ভ্রমণকৃত জায়গা সমূহ
ঢাকা - বান্দরবান - থানচি পাড়া - সাঙ্গু নদী -রেমাক্রি ফলস্ - নাফাখুম - জিন্নাপাড়া - ক্রাইসং ঝড়না - দেবতা পাহাড় - নাইক্ষংখুম - আমিয়াখুম - ভেলাখুম - দেবতা পাহাড় - নিকোলাস পাড়া - জিন্নাপাড়া - শালাপ্রু পাড়া - হড়িসচন্দ্র পাড়া - পদ্মঝিরি - পদ্মঝড়না - পদ্মমুখ - থানচি - বান্দরবান - ঢাকা
গতবছর যখন কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে বান্দরবান আসি তখন ই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ট্যুর টা পরের বছর দিয়েই দিবো। তারই উদ্দেশ্যে ২৪ অক্টোবর ২০১৯ যাত্রা শুরু।
১ম দিন : (২৫ অক্টোবর)
ঢাকা - বান্দরবান - থানচি পাড়া - সাঙ্গু নদী -রেমাক্রি ফলস্ - নাফাখুম - জিন্নাপাড়া
২৪ অক্টোবর ঢাকার কলাবাগান থেকে সৌদিয়া বাস এ রাত ১০.১৫ মিনিটে আমরা ১৪ জন রওনা করি। বাংলার ভূ-স্বর্গ খ্যাত বান্দরবনে এসে পৌছাই ২৫ অক্টোবর ভোর ৫.৩০ টায়। এরপর বাস থেকে নেমেই আমরা ঢাকা ফেরার টিকেট কেটে নেই।(নাহলে পরে টিকেট পাওয়া না ও যেতে পারে)। এরপর নাস্তা করে আমরা চান্দেরগাড়ী ঠিক করার উদ্দেশে সমিতি বিল্ডিং এর সামনে যাই। সেখান থেকে আমরা চান্দের গাড়ি ঠিক করি। যেই গাড়ি আমাদেরএ নিয়ে যাবে থানচি,এরপর থানচি থেকে বিভিন্ন স্থান ২ দিন ঘুরার পর আবার যখন আমরা থানচি যাবো তখন সেই একই গাড়ি আমাদের থানচি থেকে বান্দরবন নিয়ে আসবে।
এই মোটে যাওয়া ও আসা এর ভাড়া ঠিক হয় ৯৩০০ টাকায়।
চান্দের গাড়ি = ৬৬৫ টাকা/প্রতিজন
[চান্দের গাড়িতে আরাম করে যেতে চাইলে ১৩ জন এর টিম পারফেক্ট,সামনের সিটে ১ জন,পিছনে ১২ জন। তবে অন্য আরেকদিক থেকে ১৪ জন এর টিম পারফেক্ট। নিচের বিবরণে যা লক্ষণীয় ]
চান্দের গাড়ি চড়ে আমরা বান্দরবন ত্যাগ করি সকাল ৭.৩০ টায়। নীলগিরি'র পথে যেতে হবে থানচি। অবশেষে নীলগিরির স্বর্গীয় বাতাস অতিক্রম করে আরো ২০-২৫ কি.মি পথ অতিক্রম করে অবশেষে ৩ ঘন্টা চান্দের গাড়িতে সময় কাটানোর পর আমরা পৌছালাম থানচি। থানচি পৌছানোর পূর্বে পেলাম বিজিবি চেকপোস্ট। যেখানে সবার *১ কপি করে NID/birth certificate/passport/Varsity ID Card জমা দেয়া লাগবে(বাধ্যতামূলক,তবে এক দুই জন না নিয়ে গেলে সেটা তারা বিবেচনায় আনে)। যাহোক, যখন থানচি পৌছাই, সময় তখন সকাল ১০.৩০ টা। সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের গাইড *জর্জ দাদা এর সাথে দেখা করলাম। এরপর ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম দ্রুত। তারপর সেখানে নিজেদের ডিটেইলস একটি খাতায় লিখলাম,একই সাথে আরেক কপি করে id card জমা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের গাইড দাদা নৌকার মালিক দের ডেকে আনলেন। আমাদের লাগবে ৩ টি নৌকা। প্রতি নৌকায় সর্বোচ্চ ৫ জন বসতে পারবে(নিয়ম করা)। আমরা ১৪ জন+গাইড দাদা,এই মোটে ১৫ জন ৩ নৌকা। আর এ কারণেই ১৪ জনের টিম পারফেক্ট।
প্রতি নৌকা ভাড়া করা হলো ৪.৫ হাজার টাকায়। মোটে ১৩.৫ হাজার টাকা।
নৌকা গুলো আমাদের থানচি থেকে রেমাক্রি নিয়ে যাবে। এবং দুইদিন পর পদ্মমুখ থেকে আবার থানচি নিয়ে আসবে।
মেইন নৌকা = ৯৬৫/প্রতিজন
এরপর আমরা নৌকায় চড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেই,মাঝে পুলিশ অফিসে যেতে হয়,আমাদের একটা গ্রুপ ছবি তুলে নেয় ওরা। এরপর সামনেই থানচি বাজার। সেখানে পাওয়া যায় প্রায় সকল জরুরি জিনিস(টর্চ,গ্রিপওয়ালা জুতা,টুপি,হাফ প্যান্ট)। এর পর আমরা লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নৌকায় উঠে পড়ি। লাইফ জ্যাকেট ৫০ টাকা/প্রতিদিন। লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা লাগবে আমাদের ৩ দিন।
লাইফ জ্যাকেট = ১০০ টাকা/প্রতিজন (যারা সাঁতার পারে তারা লাইফ জ্যাকেট নেয় নি)।
এরপর আমরা নৌকায় উঠে পড়ি,এবং সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্যে নিজেদের সমপর্ণ করে ২ ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাই রেমাক্রি ফলস্ এ। সময় তখন দুপুর ১.৫ টা কি ২ টা। (নৌকা ভ্রমণে টুপি রোদ থেকে রক্ষা করবে)।
রেমাক্রি ফলস্ এর পানির স্রোতে আমরা নিজেদের সামলাতে না পেরে সবাই নেমে পড়ি রেমাক্রি ফলস্ এ। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করার পর আমরা রওনা করি জিন্না পাড়ার উদ্দেশ্য। শুরু করতে হবে ট্রাকিং। প্রায় ৫ ঘন্টার ট্রাকিং,ভেবেই আমরা হতাশ হচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের গাইড দাদা জানালেন যে,নদীতে পানি ভালোই,তাই চাইলে ওইদিক থেকে নৌকা নিয়ে প্রায় ২ ঘন্টার ট্রাকিং পথ আমরা কমাতে পারবো। যেই বলা,সেই কাজ,হয়ে গেলাম রাজি। নৌকা ঠিক হলো ২৪০০ টাকায়।
দ্বিতীয় ধাপের নৌকা = ১৭০ টাকা/প্রতিজন।
পৌছে গেলাম ৩০ মিনিটের মধ্যে অন্য এক পাড় এ। এবার ট্রাকিং করা লাগবে ৩ ঘন্টা। শুরু হলো আমাদের প্রথম দিনের ট্রাকিং। উচু নিচু পাথর জঙ্গল কাদামাটি কোমড় পানি পার করে ১ ঘন্টার মধ্যে আমরা পৌছে গেলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত নাফাখুম জলপ্রপাতে।(ট্রাকিং এর জন্য গ্রিপওয়ালা সেন্ডেল জরুরি,জুতা পরিহার করা উত্তম)। যারা সাতার পারে তারা চাইলে নাফাখুম জলপ্রপাতে লাফ দিতে পারে। সেখান কার সৌন্দর্য উপভোগ করার পর আমরা আবার হাটা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে নেমে আসলো অন্ধকার।(এর জন্য টর্চ লাইট সাথে নেয়া বাধ্যতামূলক) মোটামুটি ১.৫ ঘন্টা অন্ধকারে ট্রাকিং এর পর আমরা পৌছে গেলাম আমাদের গন্তব্য জিন্নাপাড়ায়। সময় যখন সন্ধ্যা ৭.৩০ টা। সেখান কার সবথেকে বড় সমস্যা হলো ফ্রেস হওয়ার জায়গা। গোসল করার জায়গা মাত্র দুটো। কিন্তু মানুষ এর সংখ্যা অনেক। কোনোরকম ফ্রেস হয়ে আমরা খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রথম দিনের সমাপ্তি এখানেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ১ঃ বান্দরবন থেকে যতো দ্রুত সম্ভব রওনা করতে হবে,এবং থানচি পৌছানোর পর ও যতো দ্রুত সম্ভব রওনা করতে হবে। নাহলে নাফাখুম পৌছাতে সন্ধা হয়ে গেলে নাফাখুম এর সৌন্দর্য আর উপভোগ করা যাবেনা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ২ঃ প্রথম দিনের মোট ট্রাকিং সময় : ৩ ঘন্টা(যদি পানি কম থাকার কারণে দ্বিতীয় ধাপের নৌকা না চলে তবে ৫ ঘন্টা)
বিশেষ দ্রষ্টব্য ৩ঃ প্রথম দিনের মোট হাঁটা : ১৬-১৭ কি.মি।
[ ট্রাকিং এর সময় প্রায় ই দেখা যায়,আবর্জনা এদিক ওদিক পড়ে থাকতে,পানিতে ভাসতে। পরিবেশ দূষিত না করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সহায়তা করুন ]
দ্বিতীয় পর্ব আসিতেছে........।
Written Byওয়াহেদ



0 Comments