
বান্দরবান ট্যুরঃ ৫ রাত - ৪ দিনের প্লান
বান্দরবান ভ্রমণ
স্বর্ণমন্দির - বগালেক - কেওক্রাডং - দেবতাখুম
প্রথম দিন
১৭.১২.১৯
আমরা
ছিলাম মোট ১৬ জন।এর মধ্যে ১৪ জন রাত ১১ টার বাসে রওনা দেই ঢাকা থেকে বান্দরবান এর
উদ্দেশ্যে।বাকি ২ জন যুক্ত হবে চট্টগ্রাম থেকে। ঢাকা থেকে আমাদের ট্যুরমেট ছিল
ইউনিক।
বাস
ভাড়া=৬২০৳
দ্বিতীয় দিন
১৮.১২.১৯
ভোর
৪ঃ২০ এ পৌঁছে যাই বান্দরবান।চিটাগং থেকে আমাদের বাকি ২ জন মেম্বারের বান্দরবান
আসতে সকাল ১০ বাজবে। আমদের হাতে প্রায় ৫ ঘন্টার মত অলস সময় ছিল। আমরা একটা হোটেলে
বসে ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আলো ফুটতেই সবাই নাস্তা করে বান্দরবান
শহরটার একটু ঘুড়ে নিলাম।২০ তারিখের জন্য হোটেল বুকিং করে নিলাম।
আমাদের
আগে থেকেই বগালেকের জন্য আপডাউন চান্দের গাড়ি বলা ছিল।ঠিক করেছিলাম ১৩০০০ টাকায়।
আপনারা মানুষ ১৪/১৫ জন হলে ১২০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আশা করি।
Foysal vai(chander gari): +8801867542082
একজনের চট্টগ্রাম থেকে সতে দেরী হওয়ায় আমরা ১৫ জন আরও ৪০০৳ বাড়ায় দিবো বলে ফয়সাল ভাইকে নিয়েই চলে যাই স্বর্ণ মন্দির। পার পারসন ৫০ টাকার টিকেট কিনে চলে যাই স্বর্ণ মন্দিরের ভেতর। এর মধ্যে আমাদের বাদ থাকা একজন ট্যুরমেট পৌঁছে যায় বান্দরবান।
তাকে নিয়ে সকাল ১১ টার আমরা ১৬ জন রওনা হই বগালেক এর উদ্দেশ্যে। ২ ঘন্টা ১০ মিনিটে পৌঁছি রুমা বাজারে। সেখান অপেক্ষা করছিলেন আমাদের গাইড প্রকাশ দা। এই লোকটার মত অমায়িক মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। আমরা প্রকাশ দাদা কে ৩ দিনের জন্য নেই। গাইড হিসেবে ইনি ১০/১০।
(প্রকাশ বড়ুয়া - 01887659360)
ভোরের বগালেক
রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে হয়।সব কাজ আপনার গাইড ই করবেন, আপনি শুধু তাকে সাহায্য করবেন। (একটা কথা বলে রাখা ভালো গাইড প্রতি ১৫ জনের বেশী কখনোই আর্মি ক্যাম্প থেকে অ্যালাউ করবে না। যদি আপনার টিম ১৫ জন থেকে ১ জনও বেশী হয় তাহলে আপনাকে ২ জন গাইড নিতে হবে।আমরা ব্যপারটা জানতাম না বিধায় অনেক অনুরোধ করার পর ১৬ জনের পারমিশন পেয়েছিলাম।) পারমিশন নেবার পর, দুপুরের খাবার সেরে নেই,রাতে bbq র জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু রুমাবাজার থেকে কিনে নেই। বাজার ও বার বি কিউ র যাবতীয় কাজ প্রকাশ দা নিজেই করেছিলেন।
পথে রুমা বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নাম এন্ট্রি করে রওনা হই বগালেকের উদ্দেশ্যে। ১ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাই বগালেক। পাহাড়ের উপর থেকে যে রূপে বগালেক কে দেখলাম সে দৃশ্য অপরুপ। বগালেক পৌঁছে আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে নিলাম। তারপর কটেজে ব্যাগ রেখে বগালেক এর পাড়ে যেয়ে গোসল সেরে নিলাম।বগালেকে নামা নিষেধ, তাই মগ দিয়ে গোসল করতে হয়েছে। এরপর আসপাশ একটু ঘুরে নিলাম। রাতে bbq, চা, গান, আড্ডা, সবকিছু মিলে সময়টা গল্পের মত কাটতে লাগলো।
তৃতীয় দিন
১৯.১২.১৯
ভোরে ঘুম
থেকে উঠে চলে যাই বগালেকের পাড়ে।কুয়াশাচ্ছন্ন বগালেক অপরুপ।চা খেয়ে;কিছুক্ষণ ফটোসেশান চললো।সকালে বগালেক এ ভাত, খিচুড়ি এবং কলা- বিস্কিট পাওয়া আছে।আমরা একেকজন একেকটা দিয়ে সকালের
নাস্তা সারলাম।
রাতে
কেওক্রাডং এ রাত্রি যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছোট একটা ব্যাগে নিয়ে;সাথের বড় ব্যাগটা বগালেকে রেখে ট্র্যাকিং শুরু করলাম।ব্যাগ রাখার
ব্যবস্থা আপনার গাইড ই করে দিবে।
কেওক্রাডং
এর উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় পানি এবং চকলেট নিয়ে নিবেন।চকলেট আপনার
বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ দিবে।
শুরু হল ট্র্যাকিং;কুয়াশা আর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে হাঁটতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক হাটার পর পৌঁছাই চিংড়ী ঝর্ণায়।ওখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার হাঁটা শুরু করি।একটানা হাঁটার প্রয়োজন নেই;সময় নিয়ে আস্তে আস্তে হাটুন।আধাঘন্টা পর পর ৫ মিনিটের জন্য রেস্ট নিন। চিংড়ী ঝর্ণা থেকে হাটা শুরু করে ১ ঘন্টা পর পৌঁছই একটা জায়গায়(নামটা ভুলে গেছি)।ওখানে পাহাড়ি পেঁপে,আখ,কলা,বিভিন্ন ধরনের শরবত পেয়ে যাবেন।পেঁপে,কলা অনেক কমে পেয়েছিলাম এবং একদম ফ্রেশ।
ওখান
থেকে আবার ট্র্যাকিং শুরু...তারপর পৌঁছাই দার্জিলিং পাড়া।
অসম্ভব
সুন্দর, সাজানো- গোছানো একটা
গ্রাম।দার্জিলিং পাড়ায় কিছু সময় কাটিয়ে এবার হাঁটা শুরু করলাম আমাদের আসল গন্তব্য
কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে।মিনিট ৪০ এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম কেওক্রাডং এ।আমাদের ৫
ঘন্টার মত লেগেছে বগালেক থেকে কেওক্রাডং আসতে।পথে থেমেছি;খেয়েছি;প্রচুর ছবি তুলেছি নাহলে
৩/৩.৫ ঘন্টায় ও উঠা সম্ভব।
ওখানে
পৌঁছে আর্মি ক্যাম্প এ সবাই নাম এন্ট্রি করে নিলাম।কেওক্রাডং এ ৫০ টাকায় গোসলের
ব্যবস্থা আছে।ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যাই রুমে।কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে
হ্যালিপেডে যাই;সূর্যাস্ত পর্যন্ত ওখানেই
ছিলাম।তারপর চলে আসি একদম চূড়ায়;ততক্ষণে তারায় ছেয়ে গেছে আকাশ;কনকনে ঠান্ডায় সবাই গুটিসুটি হয়ে আড্ডা,চা আর তারা দেখতে দেখতেই রাতের খাবারের সময় হয়ে গেল।রাতের খাবার শেষ
করে রুমে গিয়েই কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার শুরু আড্ডা।
চতুর্থ দিন
২০.১২.১৯
কেওক্রাডং এ সূর্যাস্ত
সকালে
প্রকাশ দা ঘুম থেকে ডেকে তুলেন সূর্যদয় দেখার জন্য।নিচে মেঘের ভেলা আর তার উপরে
সূর্যদয়;সবমিলিয়ে একটা মোহ তৈরি
হয়েছিল।রুটি আর চা দিয়ে নাস্তা সেরে,আর্মি ক্যাম্প এ চেক আউট
করে; কেওক্রাডং কে বিদায় জানিয়ে নিচে নামা শুরু করি। পৌনে তিন
ঘন্টায় চলে আসি বগালেকে;ততক্ষণে আমাদের চান্দের
গাড়ি ও চলে এসেছে।ফ্রেশ হয়ে,ব্যাগ নিয়ে;বগালেক এর আর্মি ক্যাম্প এ সাইন করে চলে আসি রুমা বাজার।দুপুরের খাবারটা
আমরা রুমা বাজারেই করি।রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প এ সাক্ষর করে ;প্রকাশ দা বিদায় জানিয়ে চলে আসি বান্দরবান শহরে। কয়েকজন
ট্যুরমেট কাজ পরে যাওয়ায়,তারা ব্যাক করে;বাকিরা থেকে যাই বান্দরবান। কারন আমাদের পরের দিনের প্লান এ ছিল
দেবতাখুম। আগে থেকে
বুকিং দিয়ে রাখা হোটেলে গিয়ে উঠি সবাই।ফ্রেশ হয়ে; রেস্ট নিয়ে;সন্ধ্যায় বান্দরবান শহর টইটই করে ঘুরি;বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে যে যার কেনাকাটা সেরে নেই।রাতের খাবার সেরে
রুমে চলে আসি।
পঞ্চম দিন
২১.১২.১৯
দেবতাখুম
গিয়েছিলাম ৯ জন।দেবতাখুম যাওয়ার প্লান থাকলে একটু সকাল সকাল রওনা দেবার চেষ্টা
করবেন। একটু
দেরিতে ঘুম থেকে উঠায়;নাস্তা না করেই চলে যাই
রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড এ ১০ টাকা জনপ্রতি করে অটো ভারায়। বান্দরবান-
রোয়াংছড়ি বাস ভাড়া ৬০ টাকা। ১ ঘন্টা
পর পৌঁছই রোয়াংছড়ি বাজারে। আগে থেকে
গাইড ঠিক করে যাইনি;তাই রোয়াংছড়ি নেমে স্থানীয়
একজনের সাথে কথা বলে গাইড ঠিক করি(১০০০৳ ফিক্সড)।
দেবতাখুম। এই যায়গা থেকেই নৌকায় উঠতে হয়।
- দেবতাখুম যাবার জন্য দুই কপি National Id/জন্মনিবন্ধন এর ফটোকপি আবশ্যক।
আমরা
নাস্তা করি এবং এর মধ্যে আমাদের গাইড পারমিশন এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র
গুছিয়ে নেন।তারপর রোয়াংছড়ি থানা থেকে অনুমতি নিয়ে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়ায় যাই
কচ্ছপতলি বাজারে। ওখানকার আর্মি
ক্যাম্প এ নাম এন্ট্রি করে ট্র্যাকিং শুরু করি দেবতাখুম এর উদ্দেশ্যে।১.৫ ঘন্টা পর
পৌঁছই দেবতাখুম এ।
পার
পারসন ১৫০ টাকায় ভেলা+লাইফ জ্যাকেট এর জন্য রশিদ নেই।এক ভেলায় দুই জন উঠা যায়। ২০০
টাকায়(ভাত+ডাল+দেশি মোরগ+আলু ভর্তা+সবজি)প্যাকেজে দুপুরের খাবার অর্ডার করে চলে
যাই খুমের মধ্যে।
তারপর ভেলায় চড়ে দেখতে লাগলাম অপার্থিব দেবতাখুম।খুমের যত ভেতরে যাচ্ছিলাম তত বেশী সৌন্দর্য চোখে ধরা দিচ্ছিল।বেশ অনেকটা সময় কাটাই খুমের মধ্যে।তারপর আগে থেকে বলে রাখা মেন্যুতে দুপুরের খাবার সেরে;কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে চলে আসি কচ্ছপতলি বাজার।বিকাল ৫ টার মধ্যে কচ্ছপতলি বাজারের আর্মি ক্যাম্প এ চেক আউট করতে হয়।কিন্তু আমাদের একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। এবার কচ্ছপতলি বাজার থেকে দুইটা মাহিন্দ্রা ঠিক করে ডিরেক্ট বান্দরবান চলে আসি।
রাত ৯ঃ৩০ ছিল আমাদের বাস।টিকেট আগে থেকে করা ছিল।খাবার খেয়ে বাস এ উঠে বসি।পরদিন সকাল ভোরে আল্লাহর রহমতে সুন্দর একটা ট্যুর শেষ করে ঢাকা পৌঁছই।
যাবতীয়
খরচঃ
১ম দিন
ঢাকা - বান্দরবান →৬২০৳
২য় দিন
সকালের নাস্তা ৬০৳
স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশমূল্য ৫০৳
বান্দরবান-স্বর্ণমন্দির-বগালেক-বান্দরবান চান্দের গাড়ি (১৩৪০০÷১৬)=৮৩৮৳
দুপুরের খাবার ৮০৳
অনুমতি
জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র+ ঔষধ (৪৪০÷১৬)=২৮৳
রাতে bbq (২০৩০÷১৬)=১২৭৳
বগালেকে রাত্রিযাপন ১৫০৳[(ফিক্সড)পার পারসন]
৩য় দিন
[গাইড সহ
১৭ জন]
সকালের নাস্তা+ট্র্যাকিং এর জন্য বাশ+গাইডের নাস্তা=১৯৬০৳
পানি+চকলেট ২২০৳
(১৯৬০+২২০)÷১৬=১৩৭৳
কেওক্রাডং এ দুপুরের খাবার ১৭*২০০=৩৪০০÷১৬=২১২৳
কেওক্রাডং এ রাত্রিযাপন ১৭*৩০০=৫১০০÷১৬=৩১৮৳
রাতের খাবার
(১৭*১৩০)÷১৬=১৩৮৳
৪র্থ দিন
কেওক্রাডং এ সকালের নাস্তা+চা=৪৫৳
রুমায় দুপুরের খাবার =১০০৳
গাইড খরচ ৩ দিনের জন্য ২৬০০৳(সাথে গাইডের থাকা-খাওয়া আপনাদের উপর)।
আমরা
২৮০০ দিয়েছিলাম দাদাকে।
২৮০০÷১৬=১৭৫৳
বান্দরবান এ হোটেল খরচ (৩ রুম)
৩২০০÷১২=২৬৭৳
রাতে খাবার যে য়ার মত করে করেছিলাম।
৫ম দিন
হোটেল টু বাসস্ট্যান্ড ১০৳
বান্দরবান-রেয়াংছড়ি বাস ভাড়া ৬০৳
নাস্তা + অটো +পানি (৩৭০÷৯)=৪০৳
রোয়াংছড়ি - কচ্ছপতলি ৬০৳
ভেলা+লাইফ জ্যাকেট ১৫০৳
দুপুরের খাবার ২০০৳
কচ্ছপতলি বাজার থেকে বান্দরবান (১০০০*২)÷৯=২২৩৳
[আমরা
প্রথমে মাহিন্দ্রা ঠিক করেছিলাম ৮০০ টাকায়;কিন্তু আমাদের দেবতাখুম
থেকে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায়;উনারা কেউ ১০০০ এর কমে রাজি
হননি]
বান্দরবান - ঢাকা ৬২০৳
মোট খরচ ৪৭০৮ টাকা।
(এই খরচের বাইরেও কেনাকাটা এবং খাবারে আমরা কিছু এক্সট্রা খরচ করেছিলাম।মোটামুটি ৫০০০৳ হলে আপনি সুন্দরভাবে ট্যুরটি কমপ্লিট করতে পারবেন।)
আপনাকে হয়তো অনেকগুলো যায়গায় নাম এন্ট্রি করতে হবে;এতে বিরক্ত হবেন না।বরং বাংলাদেশ আর্মি এবং বাংলাদেশ পুলিশ কে এ ব্যাপারে সাহায্য করুন।কারন পুরোটাই আপনার নিরাপত্তার জন্য।
সাথে অবশ্যই NID/ জন্মনিবন্ধন/Student Id রাখবেন।
যেখানেই
যান আশপাশ পরিস্কার রাখুন,ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট
স্থানে ফেলুন এবং স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।ধন্যবাদ।
5 Comments