• Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip
  • Create A Story
  • Find A Story
  • My Story List
  • Join Our Trip

বান্দরবান - বাংলাদেশের বুকে যেন এক টুকরো স্বর্গ

A Travel Guide
In
1028 views

বান্দরবান - বাংলাদেশের বুকে যেন এক টুকরো স্বর্গ

বান্দরবান ভ্রমণনামা

18 Apr 2019, 07:04 am
( 4099 words, Reading Time: 20.50 min)

বান্দরবান আমাদের সকলের কাছেই স্বর্গের মতো।আমাদের স্বর্গ নষ্ট করার অধিকার কেউ আপনাকে দেয় নাই।তাই অনুরোধ করলাম নিজের মধ্যে যদি বিবেকটুকু থেকে থাকে তাইলে যত্রতএ ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্ধারিত স্থানে ফেলুন।আর যদি তা সম্ভব না হয় আপনার ব্যাগে পলিথিন রাখবেন ওখানে বিস্কিটের প্যাকেট এবং অন্যান্য অপচনশীল ময়লা আবর্জনা নিয়ে পরে নির্ধারিত স্থানে ফেলুন(যেমনটি আমরা করেছিলাম)।


আরেকটি জিনিস নিয়ে বলতে চাই।যদিও আমি কাউকে এ ব্যাপারে তেমন একটা কথা বলতে দেখি না সেটি হলো-আমরা পাহাড়ে মেহমান হিসেবে যাই।আর ওরা ওখানে সব সময় থাকে।তাই আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যাতে ওরা বিরক্ত হয়।তাদের প্রাইভেসির যথাযথ সম্মান দেয়া উচিত।


প্রথম দিন
বান্দরবান। বাংলাদেশের বুকে যেন এক টুকরো স্বর্গ।সেই স্বর্গ দেখার নেশায় গত বছরের মার্চের ১৩তারিখ রাতে যাএা শুরু।ডেসক্রিপশন এর শেষে টীকাগুলো আছে একটু চোখ বুলালে মজা পাবেন।

রুট:বান্দরবান শহর-মিলনছড়ি-থানচি-তিন্দু-বড়পাথর-রেমাক্রি

১৪/০৩/১৮,আমাদের ৭টায় পৌছানোর কথা থাকলেও ফেনীর জ্যামের জন্য বান্দরবান শহরে পৌছালাম প্রায় ৯টায়।রিটার্ন টিকেট কেটে নিলাম।এরপর গেলাম চাঁদের গাড়ি ঠিক করতে শহরের 'মৌকছে ব্রিজ' এর পাশে।চাঁদের গাড়ি ঠিক করে খেতে আসলাম পাশের এক হোটলে। খাওয়াদাওয়া শেষ।এবার শুরু হলো *বান্দরবান* থেকে থানচি ভ্রমণ।চাঁদের গাড়ি আকাবাকা খাড়া পথ বেয়ে উঠা শুরু করলো যেন দিগন্তকে ছোয়ার নেশায়।আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো দিনের মধ্যে রেমাক্রি পৌছানো তাই পথের মধ্যে দেখার সপ্টগুলো বাদ দিয়ে সোজা চলে গেলাম থানচি।পথিমধ্যে চিম্বুক এবং বলিপাড়া বিজিবি ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলাম।আমরা থানচিতে যখন পৌছি তখন বাজে বেলা ১:৩০টা।থানচিতে গিয়ে দেখা করলাম আমাদের গাইড এর সাথে।উনি আমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিলেন পর্যটন করপোরেশন এ।খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ থেকে পারমিশন নিয়ে পৌছে গেলাম *থানচি* নৌঘাটে।সেখানে নৌকা ঠিক করে বিজিবির পারমিশন নিয়ে আমরা নৌকায় উঠলাম। শুরু হলো *সাঙ্গু* নদী ভ্রমণ।আস্তে আস্তে আমাদের চোখের সামনে আসলো সাঙ্গুর মনোরম দৃশ্য।এর প্রতিটি বাক যেন এক এক রকমভাবে দেখার মতো।যেতে দূর পাহাড় হতে ভেসে আসে অজানা পাখির ডাক।আরো দেখা যায় গয়াল,ডাহুক পাখি সহ কত কি!!আস্তে আস্তে সাঙ্গুর রূপ বদলাতে লাগলো।খরস্রোতা রূপ নিয়ে উঠে আসতে লাগলো আমাদের সামনে।তার সাথে যোগ হলো পাথর। নৌকা এই পাথরে ধাক্কা খেতে খেতেই এগিয়ে যেতে লাগলো।এমন প্রায় ১ঘণ্টা পর পদ্মমুখ এবং বরিয়ারি পেরিয়ে আমরা এসে পৌছালাম *তিন্দু* তে। তিন্দুতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবার পর আবার যাএা শুরু করলাম।যেহেতু বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে তাই দিনের আলো থাকতে থাকতেই রেমাক্রি পৌছানোর দরকার।তিন্দু বাজার পার হওয়ার পর আমাদের চোখের সামনে আসলো আগের চেয়েও অনেক বড় বড় পাথর।বুঝতে দেরি হলো না যে,আমরা এসেছি *বড় পাথর * এলাকায়।বড় পাথর এলাকায় বড় বড় অনেক পাথর আছে যেমন:*রাজাপাথর*, রাণী পাথর,কলসী পাথর ইত্যাদি।এ জায়গা টা একটু বিপদজনক।সাঙ্গুতে ঘটে যাওয়া প্রাণহানির ৮০% ই ঘটে এই বড় পাথর এলাকায়।কারণ স্রোতের বিপরীতে চলা নৌকা এখানকার ডুবো পাথরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়।বড় পাথর এলাকা পার হবার পর সোনাপাহাড় এর নিচ দিয়ে একটু হেটে যেতে হয়(এখানে কিছু দোকান আছে চাইলে এখানে অনেকে হালকা নাস্তা করে)হাটার ক্ষেএে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।এখানে আরেক ধরনের শ্যাওলা দেখা যায় যার রং লাল।এসব শ্যাওলা পথে হাটা যতটুক সম্ভব এভয়েট করে আমরা আবার সামনে গিয়ে নৌকায় উঠলাম।এরপর আবার কিছুক্ষণ নৌকায় চড়ে আমরা দূর হতে শুনতে পেলাম রেমাক্রি ঝর্নার শব্দ।রেমাক্রি ঝর্না যেন "সায়োন আয়ো রে আয়ো হে" সংগীতের মোহ জাগিয়ে আমাদের নিমন্ত্রণ করছে।কিছুদূর এগুনোর পর চোখের ফ্রেমে আটকা পড়লো সুন্দর *রেমাক্রি ঝর্না*।এরপর আমরা সাঙ্গু নদী ক্রস করে চলে যাই কটেজে,যেটা আমাদের গাইড আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো!তখন বাজে সন্ধ্যা ৬টার মতো।এরপর আমরা সামান্য বিশ্রাম নেই।রাত ৯:৩০টার দিকে আমাদের খাবার রেডি হয় সাঙ্গুর পাশের এক দোকানে সাঙ্গুর বহমান পানির স্রোত শুনতে শুনতে আমরা আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করি।পরে কটেজে গিয়ে সাঙ্গু এবং রেমাক্রি ঝর্নার মিলিত শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই।
--------------------------
টীকা:

বান্দরবান :--------------
বান্দরবান নামটির উৎপত্তি হয়েছে শহরের কাছাকাছি 'মৌকছে ব্রিজের' নিচে অবস্থিত 'মৌকছে' নামক ঝিরির নামানুসারে।'মৌকছে' হচ্ছে মারমা শব্দ যার অর্থ 'বানরের শেকল'।মৌক-অর্থ হলো বানর।আর ছে -অর্থ হলো শেকল>বন্দ>বান্দা।যার মানে অর্থ দাড়ায় বান্দরবান্দা বা বান্দরবান। এককালে এখানে অনেক বানর ছিলো।বানররা খাল পাড়াপাড়ের জন্য পরস্পরের সাথে লেগে গা ঘেষাঘেষি করে শেকলের মতো লাইন তৈরি করতো স্থানীয় মারমা আদিবাসীরা একে মৌকছে বলে ডাকতো।যার ফলশ্রুতিতেপরে এর নাম হয় বান্দরবান।বান্দরবান এ মারমা রাজার বাড়ীও অবস্থিত।এখানে আরও আছে দেশের একমাএ রাইফেলস ট্রেনিং সেন্টার।

9nB6zQtSLTJJc9Pi.jpg
সাঙ্গু:-------------------
বান্দরবান শহরে বহমান গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো সাঙ্গু নদী।সাঙ্গু নদী ব্যতিক্রম একটি নদী।সাঙ্গু নদীর আরেক নাম "শঙ্খ"' নদী।এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের নাইক্ষিয়াংছড়ির দিকে আরকানের পাহাড়ে জন্ম নিয়ে উত্তর দিকে গিয়ে থানচি,রুমা,বান্দরবন শহর,দোহাজারি হয়ে ১৬০কিমি পাড়ি দিয়ে আরও ছোট-খাট ৭টি নদী সহ বঙ্গোপসাগর এ পতিত হয়েছে।সাধারণত আমাদের দেশের সব নদী দক্ষিণ- উত্তর এ গিয়ে সাগরে পতিত হয়েছে।কিন্তু একমাএ সাঙ্গু নদীই উত্তর -দক্ষিণ গিয়ে পূর্ব-পশ্চিম এ গিয়ে সাগরে পতিত হয়েছে।আর পাহাড়ি নদী বিধায় এ নদী কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বটে।কারণ যেকোনো মুহুর্তে হরকাবান হতে পারে।আর চলতি পথে পাথর সাঙ্গু নদীকে এনে দিয়েছে নতুন মাএা।এ নদীতে চলতে গেলে আপনার চোখে পড়বে পাহাড়-নদী-নীল আকাশের এক
অদ্ভুদ মিতালী।

Yt6cKjg8Hhot36DD.jpg
থানচি:-------------------
বাংলাদেশের একটি উপজেলা হল থানচি।এখানকার থানা সদরদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে।এখানকার ইউনিয়ন ৪টি।মৌজা ১১টি।থানচি শব্দের অর্থ হলো 
" বিশ্রামাগার"।ধারণা করা হয় ১৯৫০ সাল বা তারও পূর্বে মানুষজনের এসব দুর্গম পথে যাতায়াতের একমাএ মাধ্যমছিলো নৌকা।যাএাপথে সবাই এই জায়গায় এসে বিশ্রাম নিতো বলে এর নাম হয় বিশ্রামাগার মানে থানচি।থানচিতে দেখার উল্লেখযোগ্য স্থানটি হলো -"চেনকন ঝিরি"।এই ঝিরির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ঝিরির সবগুলো পাথর দেখতে গোল অর্থাৎ গোলপাথর।বান্দরবনের গহিনে কেউ ট্রেকিং করতে চাইলে তার ছোটখাট ট্রেনিং সবাই এখানেই নিতে পারে।এখানে আরও আছে "টিএনটি পাড়া"-যা কিনা এই এলাকায় বাঙ্গালিদের শেষ আবাস্থল। 


তিন্দু :-----------------
রেমাক্রি যাবার পথে একটা বাজার পাওয়া যায়।যার নাম তিন্দু বাজার।তিন্দু পাড়ার নামানুসারেই এ বাজারের নাম।এটি একটি মারমা পাড়া।যাএাপথে সবাই এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।তিন্দু বাজার টা অনেকটা চারকোনা টাইপ এর।এখানে আছে তিন্দু ঝিরি। হাতে সময় থাকলে এখানে যাওয়া যায়।


বড়পাথর:-----------------
যাএাপথের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক একটা জায়গা হলো বড়পাথর।এখানে রয়েছে বড় বড় বেলেপাথর।এই জায়গাটা নিয়ে কিছু মিথ আছে।মিথটি হলো----তিন্দু অন্ঞলে খুমিদের এক রাজা ছিলো।একবার এই তিন্দু রাজার সাথে দতং রাজার যুদ্ধ হয়।যুদ্ধে দতং রাজা জয়ী হয় এবং তিন্দুর রাজা পরাজিত হয়ে রাজ্য ত্যাগ করে।এরপর রাজা পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে তার রাণী-সভা সংসদ সহ শঙ্খ নদীতে জীবন বিসর্জন দেয়।কিন্তু শঙ্খ নদী রাজাসহ তার পুরো পরিবারবর্গ কে বাচিয়ে আশ্রয়দান করেছে পাথর বেশে।তাইতো তার কোনোটি রাজাপাথর,রানীপাথর,কলসী,থালা মুকুট।তাই,এই জায়গাটি স্থানীয়দের কাছে ধর্মীয়ভাবে পবিএ।তাই অযথা চিল্লাচিল্লি না করে শান্তভাবে থেকে আশেপাশের সৌন্দর্য অবলোকন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

SpPCH7lLiStr83fj.jpg

রাজাপাথর:--------------------
বড় পাথর এলাকায় সবচেয়ে বড় একটি পাথর আছে।সেটিই রাজাপাথর।ধারণা করা হয় এটিই সেই তিন্দু রাজা।
বর্ষায় বড় পাথর এলাকায় সব পাথর ডুবে গেলেও এই রাজা পাথরই সগৌরবে দাড়িয়ে থাকে।মাঝিরা এখানে যাএাপথে যাএা সেইফ হওয়ার জন্য বড়পাথরে টাকা পয়সা দিয়ে থাকে।অনেকে প্রার্থনাও করে থাকে।


দ্বিতীয় দিন
রুট:
রেমাক্রি-পেনেডংপাড়া-হ্যাডম্যানপাড়া-লামা ফল-নাফাখুম-রাইদংছং পাড়া-উইলাপাড়া-জিনাপাড়া-থুইসাপাড়া

একটা জিনিস আমি সবসময় মানার চেষ্টা করি,ভ্রমনে গেলে আমি কখনই সুন্দর সকালটা ঘুমিয়ে কাটাই না।বরং তাড়াতাড়ি শুয়ে সকাল সকাল উঠে সৌন্দর্য অবলোকনের চেষ্টা করি।তাই সকালে খুব তাড়াতাড়ি উঠে বেরিয়ে পড়লাম রেমাক্রি পাড়াটা দেখার জন্য।দেখলাম নাগরিক সুবিধা বণ্ঞিত শিশুদের পড়াশুনা করার একটা স্কুল।চারকোণা রেমাক্রি বাজার।রেমাক্রির *হ্যাডম্যান* এর বাসা।এরপর দেখলাম পাহাড়িরা জুম চাষের জন্য রওনা দিচ্ছে।হাতে পিওর তামাক কাধে জুমের ঝুরি।দূরে দেখতে পেলাম জুম ঘর।আর সাঙ্গুর বাকে দেখলাম তরমুজ,লাউ চাষ।এসব দেখে ফিরে আসতে আসতে প্রায় ৮টা বেজে গেল।এরপর সাঙ্গুর পাশের দোকানে সকালের নাস্তা সেরে কটেজে গিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।বাজে সকাল৯টা এবার আমরা যাএা শুরু করলাম নাফাখুম ঝরনার উদ্দেশ্যে।যাবার পথে রেমাক্রি ঝরনাটা দিনের আলোয় আরো ভালো করে দেখে নিলাম।এরপর রেমাক্রি নদী(রেমাক্রি খাল)ধরে চলা শুরু করলাম,পেছন *রেমাক্রিকে* ফেলে।এরপর কিছুক্ষণ হাটার পর পেলাম পেনেডং পাড়া।পাড়ার যাএী ছাউনিতে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম।এরপর শুরু হল আবার পথচলা চলতে চলতে,দূরের হ্যাডম্যান পাড়ার মরিচীকা চোখে ধরনা দিতে শুরু করল।হ্যাডম্যান পাড়ায় কিছুক্ষণ জিরিয়ে এরপর আবার ট্র্যাকিং শুরু হলো এভাবে কখন ঝিরি পথ, কখনও মরুভূমির মতো বালি দিয়ে চলে হঠাৎ দেখলাম ডান দিকে একটা পথ কৈ যেন চলে গেছে গাইডকে জিগাস করার সাথে সাথে তিনি বললেন চলেন,নাম জিগেস করাতে বলে জায়গাটার নাম হলো- *লামা ফল*।এখনও এই জায়গাটা এতটা পপুলার হয় নাই।তবে ভবিষ্যতে পপুলার হবার আগে দেখে আসাটা মন্দ নয়।এরপর আবার রেমাক্রি নদী ধরে হাটা। পথে অবশ্য অনেক ঝর্না চোখে পড়ল।এভাবে ঝিরি ধরে হাটতে হাটতে প্রায় ৩ঘণ্টা হাটার পর আসলাম,অপার্থিব *"নাফাখুম"* ঝরনায়।দূর হতেই একে দেখা যাচ্ছিল অনেক অপরুপ রুপে।এরপর এখানে গোসল সেরে নিলাম।এখানে গোসল করার ক্ষেএে যথেষ্ট সাবধান থাকতে হবে।এরপর গোসল শেষে আবার ট্রেকিং উদ্দেশ্য জিনাপাড়া।পথিমধ্যে পড়ল রাইদংছং ঝিরি এবং *রাইদংছং পাড়া*।এরপর এই পাড়া ক্রস করার পর, এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে থাকা পাথর গুলো খুব কষ্টে ক্রস করলাম।এরপর খানিকটা সমতল জায়গা পাওয়া গেল। এই জায়গাটা আসলে অনেক সুন্দর যা না দেখিয়ে কাউকে বলার মানে হয় না।পাশে জুম খেতে তামাকের ফুল,দূরে উচু লম্বা পাহাড়,রেমাক্রি নদীর বাক সব মিলিয়ে জায়গাটা অতুলনীয়।এর উপরে একটা পাড়া আছে নাম *উইলাওয়া* পাড়া।এই জায়গায় বসে আমরা অনেকক্ষণ পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলা রেমাক্রি নদীর পানির, পাথরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার শব্দ শুনলাম।তারপর আবার যাএা শুরু করলাম,পাড়া পার হলাম।এরপর রেমাক্রি নদীকে বামে রেখে ডান দিকে একটা পাহাড়ী রাস্তায় উঠে গেলাম।এই জায়গাটা উঠতে সবারই কষ্ট হয় কারণ পাহাড়গুলো ভালোই খাড়া।এভাবে ২টা পাহাড় পার হবার পর পৌছালাম *জিনা পাড়া*য়।এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার যাএা শুরু করলাম,উদ্দেশ্য থুইসাপাড়া যাওয়া।এরপর আবার একটা পাহাড় বেয়ে আমরা যখন *থুইসা পাড়া*য় আসলাম তখন বাজে বিকেল ৫টা।দুপুরের খাবার যেহেতু খাওয়া হয় নাই,তাই মারটিন দাদাকে বললাম তাড়াতাড়ি যেন ব্যবস্থা করে।তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আবার উঠে পড়লাম রাতের আকাশ দেখতে,এখানকার রাতের আকাশ অনেক সুন্দর।দেখা হলো ওরিওন কে।এরপর আবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুম।
M1GLSZbMmAauJb3T.jpg
রেমাক্রি:-------
রেমাক্রি জায়গাটার বিশেষত্ব হলো এখানে একপাশ থেকে এসেছে রেমাক্রি নদী(খাল) এবং আরেক পাশ থেকে এসেছে সাঙ্গু নদী।এরপর দুটো একসাথে মিশেছে।এখান থেকে যদি সাঙ্গু ধরে যাই তবে দেখা মিলবে বড়মোদক,ছোটমোদক আন্দারমানিক ইত্যাদি জায়গা।আর রেমাক্রি নদী ধরে গেলে পাব নাফাখুম,আমিয়াখুম,নাক্ষিয়্যাং।রেমাক্রির মানুষেরা অধিকাংশই মারমা।এখানে অবস্থিত রেমাক্রি বাজারটা তিন্দু বাজারের মতোই অনেকটা চারকোণা।

4xl2PWMiaP389ESc.jpg

রেমাক্রি ঝর্ণা:---------
রেমাক্রি নদী সাঙ্গুর সাথে মেশার কিছু পূর্বে ৪-৫টি ধাপে সিড়ির মতো করে নেমেছে এবং পরে সাঙ্গুর সাথে মিশেছে।এই ধাপগুলোই এনে দিয়েছে এক বৈচিএ্য যার নাম হলো 'রেমাক্রি ঝর্ণা'।কথিত আছে এই রেমাক্রি ঝরণাকেই নাকি একসময়ে বাংলাদেশের নায়াগ্রা বলা হতো।


হেডম্যান:-------
পার্বত্য অন্ঞলে অন্য ধরনের এক প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে।এ কাঠামোর সবার উপরে রয়েছে রাজা।রাজার অধীনে রয়েছে কয়েকটি মৌজা।এই মৌজাগুলার দায়িত্ব দেয়া হয় মৌজাপ্রধান বা হেডম্যান এর উপর।এসব হেডম্যান এর অধীনে রয়েছে কারবারি।মূলত সঠিকভাবে খাজনা আদায়,সালিস এসব কাজ এরা করে থাকে।


পেনেডং পাড়া:--------
রেমাক্রির পর প্রথম যে পাড়াটা পাওয়া যায় ওটা হল পেনেডং পাড়া।এখানে বম,কুকি,চিন এরা থাকে।

BgU7ar0YXbT4GDGW.jpg
লামা ফল:--------
নাফাখুম যাবার পথে এই জায়গাটি পড়ে।জায়গাটা খুব পপুলার না হলেও অতি সম্প্রতি পপুলার হবে বলে আশা করা যায়।এখানে বর্ষাকালে একসাথে অনেকগুলো ঝরণার সৃষ্টি হয়।

gK0RlQ1awh96b3hR.jpg

নাফাখুম:------
রেমাক্রি নদী ধরে এগুতে থাকলে একসময় পাওয়া যাবে নাফাখুমকে।এটি মূলত রেমাক্রি খালেরই অংশ।রেমাক্রি নদীর বহমান পথের একটি জায়গায় হুট করে ১৫-২০ফুট উচু থেকে চলমান জলধারা লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ছে আর ওটাই নাফাখুম জলপ্রপাত। এটি প্রায় ৪০ফুট প্রশস্ত।এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২৬০ফুট উপরে।নাফাখুম মারমা শব্দ এর নাফা-অর্থ গরু-মহিষের নাকের দড়ি।আর খুম মানে হল জলপ্রপাত। নাফাখুমে গেলে চোখে পড়বে বিশাল বিশাল গর্ত।বলা হয়ে থাকে-নাফাখুমে মাছ ধরে জেলেরা একসময় মাছের নাকে দড়ি দিয়ে এইসব গর্তে রেখে দিতো।একবার কাকে নাকি টেনে গর্তে নিয়ে যায় এরপর থেকে এই জায়গাটার নাম হয় নাফাখুম।এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।এজন্য জেলেরা এখানে মাছ ধরতে আসে।এখানে প্রচুর নাটিং মাছও পাওয়া যায়।


রায়দংছং পাড়া:-------
নাফাখুমের পর এই পাড়া পাওয়া যাবে।এখানে পাশে এক ঝিরি রয়েছে নাম রায়দংছং।সেই ঝিরির নামে পাড়ার নাম হয় রায়দংছং পাড়া।এটি একটি এিপুরা পাড়া এবং কারবারি পাড়া।এখানকার কারবারির নাম হাবিশ কারবারি


উইলাওয়া পাড়া:---------
রায়দংছং পাড়া হতে রেমাক্রি খাল ধরে হাটতে থাকলে একসময় পাহাড়ে ঘেরা সমতল মতো আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গা পাওয়া যায়।এটিই উইলাপাড়া।এটি একটি মারমা পাড়া।


জিনাপাড়া:--------
জিনাপাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৪৬০ফুট উপরে।জিনা ছিলো এক কারবারি।তার নামানুসারে পাড়াটির নাম।জিনার সাথে আরেক কারবারি ছিলো নাম রায়বাহাদুর।জিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে যায় এবং ওখানে মারা যায়।এরপর এখানকার হেডম্যান হয় রায়বাহাদুর।


তৃতীয় দিন
রুট:
থুইসাপাড়া-দেবতার পাহাড়-সাতভাইখুম-আমিয়াখুম-ভেলাখুম-নাইক্ষিয়্যাং -দেবতার পাহাড়-থুইসাপাড়া

সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল একটু ভোরেই। ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পরলাম পাড়া দেখতে।আর আরেকটা ব্যাপার হলো পুরো ট্যুরে আজকের এই দিনটাই সবচেয়ে কঠিনতম দিন।এই দিনটার কথা চিন্তা করেই আমাদের সদস্য কমতে কমতে ১২তে গিয়ে ঠেকে।কেন কঠিন? একটু পরেই বলছি।যেহেতু আমাদের আজকে অনেক কঠিন দিন তাই সকালের খাওয়া দাওয়াটা ভালো হওয়া জরুরি।তাই সবাই ভালো করে খাওয়া দাওয়া করে রেডি হয়ে যাএা শুরু করলাম।প্রথমে আমাদের একটা খাড়া পাহাড় বাইতে হল,এই একটা পাহাড় বেয়ে আমাদের দলের একজন উল্টো দৌড় দিল,আর আরেকজন আগে থেকেই কাইত হয়ে কটেজে রয়ে গেল মানে আমরা সর্বমোট ১০জন কঠিনতম দিন পার করছি।এগিয়ে যাচ্ছি কাজুবাগানের ভেতর দিয়ে আরো ১টা পাহাড় বেয়ে অবশেষে আমরা পৌছালাম *দেবতা পাহাড়ের* চূরায়।এই সেই দেবতা পাহাড় যে পাহাড় সবাইকে ভয় লাগিয়ে দেয়।এই পাহাড় খুবই খাড়া। আমাদের দেবতার পাহাড় আসতে সময় লাগলো প্রায় ১ঘণ্টার মতো।এবার নামার পালা।বলা হয় দেবতার পাহাড়ে নামা কঠিন, উঠা তুলামূলক* সোজা।সামান্য একটুু ভুল পদক্ষেপে একবারে ভবলিলী সাঙ্গ হতে পারে।চলার পথের পাশে প্রায় দেড়শ ফুট গভীর খাজ।পড়লে আর বেচে ফেরবার আশা নেই।যাই হোক সৌন্দর্য দেখতে হলে কষ্ট তো একটু করতেই হবে।সাবধানে নামা শুরু করলাম।যেহেতুু খুব সাবধানে নামলাম আমাদের নামতে লাগলো প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো।যখন আমরা সবাই নিচে নামলাম তখন আবার এই পথে যাবার কথা চিন্তা করে কেমন যেন গা শিউরে উঠল।যাই হোক ওই চিন্তা বাদ দিয়ে। এবার বামের পথ দিয়ে চলা শুরু করলাম কিছুক্ষণ পাথর বাইবার পর আসলো চোখের সামনে *আমিয়াখুম* আমিয়াখুমে কিছু সময় পার করলাম।এরপর গেলাম *সাত ভাই খুমে* বড় বড় পাথরে দাড়িয়ে পাহাড়ি বুনো সৌন্দর্য দেখলাম,দেখলাম পাশের খাড়া দেবতা পাহাড় যা আমরা বেয়ে নামলাম।এরপর আমাদের মার্টিন দাদা আমাদের জন্য ভেলা নিয়ে আসলো। ভেলা নিয়ে এরপর আমরা সাতভাই খুমের ভেতরে চলে গেলাম।দুই পাহাড়ের মাঝে এই সাত ভাই খুম প্রায় ৪০-৫০ ফুট গভীর।চলার পথে শুনা গেল পাহাড়ি পাখির ডাক।পাহাড়ি বুনো ফুল।আধ ঘণ্টা যাবৎ সাত ভাই খুম দেখে আবার ফেতর আসলাম আমিয়াখুম এ।এরপর গেলাম ভেলাখুম এ।*ভেলাখুমের* ভেলা দিয়ে আমরা ভেলাখুম ধরে চলে যাচ্ছি নাইক্ষিয়্যাং খুমে।নাক্ষিয়্যাং খুমের পরের অংশ হলো *নাইক্ষিয়্যাং*। আমাদের আর নাইক্ষিয়্যাং যাওয়া হয় নাই।তবে আপনারা যারা এখানে আসবে অবশ্যই নাইক্ষিয়্যাং দেখে যাবেন।কারণ আবার কবে না কবে আসেন,এই জীবনে আর যাওয়া হয় কিনা কে জানে??এরপর আমরা আবার চলে আসলাম দেবতা পাহাড় এর নিচে।এবার উঠার পালা,খুব দ্রুতই যেন সবাই উঠে গেল উঠতে আমাদের সময় লাগলো আধ ঘণ্টার মতো।আধ ঘণ্টা পর সবাই যখন দেবতার পাহাড়ের মাথায় তখন সবারই মুখে বিজয়ের হাসি যেন কোনো এক অদৃশ্য বেড়াজাল হতে সবাই বেরিয়ে আসলো।এরপর পাশের আরেকটু উচু জায়গায় গেলাম,আশেপাশে সব ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে। পাশেই একজন আদিবাসীর সাহায্য নিয়ে জানতে পারলাম যে এখান থেকে নাকি *তাজিংডং* দেখা যায়।দেবতা পাহাড়ের পাশে আছে আরেক পাহাড়, *দতং*,এই দতং পাহাড়ের পরের যে পাহাড়টা সেটাই হলো তাজিংডং।আর আরকটু পূর্ব দিকে তাকালে আরেক পাহাড় দেখা যায়, ওটাই *সাকা হাফং*,এরপাশে রয়েছে জুগি যতলং,বড় মোদক,ছোটমোদক।হাতে সময় থাকলে এগুলা দেখে গেলেই ভালো।বলা যায় না,আবার হয়তোবা পাহাড় আপনাকে টেনে আনতেই পারে!!এরপর আবার যে পথে আসলাম সেই পথেই ২টা পাহাড় পেরিয়ে থুইসাপাড়ায় পৌছালাম।কটেজে রয়ে যাওয়া আমাদের ২ বন্ধু আমাদের বিজয়ীর মতো করে বরণ করে নিল।এরপর ঝরনার পানিতে সবাই গোসল করে নিলাম।এরপর খাওয়া দাওয়া করে আবার বিশ্রাম।

5KHEPYsVRaWjwX1C.jpg

দেবতা পাহাড়:-----------
একটা কথা বলা হয়ে থাকে যে-যে দেবতার পাহাড় বাইতে পারে সে বান্দরবন এর সকল পাহাড়ই বাইতে পারবে।আমিয়াখুম,সাতভাইখুম,ভেলাখুম,নাইক্ষিয়্যাং যেতে হলে এই পাহাড় বাইতে হবেই।দেবতার পাহাড়-নাম শুনেই এর ধরন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়।এর উচ্চতা প্রায় ১১৫০ফুট এর মতো।এই পাহাড়ে আসতে হলে বাইতে হবে আরো তিনটা পাহাড়।আর আমিয়াখুম দেখতে হলে নিচে নামতে হবে ৩৫০ফুট এর মতো।আসলে ৩৫০ফুট খুব বেশি না হলেও এটি নামতে লাগে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো।কারণ নামতে হয় হেলে পড়া পাথরের দেয়াল বেয়ে।এটি এতটাই খাড়া যে এখানে প্রতিটি পদক্ষেপ দিতে হয় সাবধানতার সাথে,নতুবা চলে যেতে হবে একেবারে ১০০-১৫০ ফুট নিচে আর ভাগ্য খারাপ হলে তো কথাই নেই।আর এখানে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করাও ঠিক হবে না।
দেবতা পাহাড়ের পাদদেশেই আছে সেই অপার্থিব 'আমিয়াখুম'।আর সবচেয়ে উচুতে উঠলে দেখা যাবে, দতং পাহাড়।এর পাশের তাজিংডং পাহাড়,সাকা হাফং,যুগি যত্লং,বড় মোদক ইত্যাদু।আর এর নিচের অংশে পাহাড়ের গায়ে রয়েছে ট্রপিক্যাল ফরেস্ট।খুব ভালো করে খেয়াল করলে এখানে পাম ট্রিও দেখা যাবে।এখানে বড় বড় মৌচাকও দেখা যায়।

qA4WNH9I3XidguaQ.jpg

আমিয়াখুৃম:---------
দেবতার পাহাড় হতে নেমে বামে বড় বড় পাথর টপকিয়ে গেলে দেখা মিলবে--আমিয়াখুম।এটিও মূলত রেমাক্রি খালের আরেক আশ্চর্য!!!রেমাক্রি খাল এখানে এসে গোল করে২০ফুট উচু থেকে লাফিয়ে পরে।একে বাংলার ভূস্বর্গ বলে অভিহিত করা হয়।কারও কারও মতে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত।

3KMq0yjZ1DLFNlf1.jpg

sknAJ2306uSgtTPw.jpg

ZlhkNm3Ne9HKA7UX.jpg

সাতভাইখুম:---------
আমিয়াখুমের পর যে জায়গাটি আসবে সেটিই হলো সাতভাইখুম।এখানে রয়েছে বড় বড় সাতটি পাথর রয়েছে।এই সাতটি পাথর হলো সেই তিন্দু রাজার সাতটি ছেলে।এখানে নাকি সাত ভাই সবসময় খেলা করতো।এরপর ভেলা দিয়ে কিছু দূর এগুলে চোখে পরবে সাত ভাইয়ের নাক।এই জায়গাটা হলো আসলে পাথুরে খাজের মাঝে বহমান জলধারা।এটি নাকি প্রায় ৪০ফুট গভীর।

N95X5Uz51TTo1UdO.jpg

ভেলাখুম:-------
দেবতার পাহাড় হতে নেমে ডানে গেলে রয়েছে এই ভেলাখুম।এখানে যেতে হয় ভেলা দিয়ে।ভেলাখুমও বড় বড় পাথুরে খাজের মাঝে বহমান জলধারা।এখানে ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা যাবে,বানর। তবে সাবধান থাকতে হবে, কারণ বানর উপর থেকে এটা ওটা ছুড়ে মারে।আরও ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা যেতে পারে,বন ছাগল,যেগুলা কিনা খাড়া পাথুরে পাহাড় বাইতে পারে।

JfWgZ57V4ZHePSC7.jpg

uraX8BzAfE68TpaH.jpg

নাইক্ষিয়্যাং:-----
ভেলাখুম দিয়ে যেতে যেতে এর শেষ মাথায়(মানে ভেলা পাথুরে জায়গা বলে আর যায় না) রয়েছে আরেক আশ্চর্য সুন্দর জায়গা নাইক্ষিয়্যাং।এটিও মূলত রেমাক্রি খালেরই অংশ।বান্দরবান এর গহীনে নাইক্ষিয়্যাং পর্যন্তই যাওয়া যায়।কারণ এরপর আছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার, সাকা হাফং। এসব জায়গায় না যাওয়াই ভালো।আর আমরা যে রেমাক্রি খাল ধরে এর উৎসের দিকে চলছিলাম সে রেমাক্রি খাল এখান পর্যন্তই সর্বোচ্চ দেখতে পারবো।যদিও এর উৎপত্তি হয়েছে আরও দূরে তলুবং নামক জায়গা থেকে।মানে নাইক্ষিয়্যাংই হলো পুরো ট্যুরের সবচেয়ে দূরবর্তী/দুর্গম স্থান।এবার আসি নাইক্ষিয়্যাং সম্বন্ধে।---------

নাইক্ষিয়্যাং---এটি মারমা শব্দ।নাইক্ষিয়্যাং=নাই+ক্ষিয়্যাং।
নাই--মানে হল মাছ।আর ক্ষিয়্যাং -----মানে হল নদী।তার মানে মাছ বেশি থাকে যে নদীতে।এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বলে এর এইরকম নাম।আশেপাশের লোকজন এখানে আসেন মাছ ধরতে।ভেলাখুমের শেষ অংশ থেকেই মূলত নাইক্ষিয়্যাং এর শুরু।এর শুরুর অংশের নাম--"নাইক্ষিয়্যাং খুমের মুখ"।আর এখানে শুরুর দিকের গভীর অংশটি হলো "নাইক্ষিয়্যাং খুম"।খুম মানে -গভীর জলাধার।নাইক্ষিয়্যাং এ আরো আছে বড় পাথর এরিয়ার মতো বড় বড় পাথর।আছে রেমাক্রি ফলস এর মতো ধাপে ধাপে সিড়ির মতো নেমে যাওয়া এক ঝরনা।এটিই হলো- "নাইক্ষিয়্যাং ঝর্ণা"।এক কথায় বলতে গেলে এটি হলো -"Miniature beauty of Bandarban"।


তাজিংডং:-----
বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড়(তথাকথিত)।তবে কারও কারও মতে এর চেয়েও উচু পাহাড় এই দেশে রয়েছে।এর দুটো পিক আছে।ফারস্ট পিক এবং মিডেল পিক।দেবতার পাহাড়ের উচুতে উঠলে একে দেখা যায়।দেখতে পাওয়া গেলেও, তাজিংডং যেতে হলে যেতে হবে অন্যপথে।শালুকিয়া পাড়া হয়ে।


দতং:-----
দেবতা পাহাড়ের পাশে এই পাহাড় রয়েছে।মূলত এই পাহাড়ের কারণে তাজিংডং কে সম্পূর্ণ দেখা যায় না।আমিয়াখুম,সাতভাইখুম,ভেলাখুম,নাইক্ষিয়্যাং মূলত দেবতা পাহাড় এবং দতং পাহাড়ের খাজেই অবস্থিত।


সাকা হাফং:-----
সত্য কথা বলতে গেলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় আসলে সাকা হাফংই।যদিও এর এখনও স্বীকৃতি মিলে নাই।এক এক জায়গায় উচ্চতা সংক্রান্ত এক এক তথ্য বিধায় এর উচ্চতা আর বললাম না।সাকা হাফং পাহাড়ে সর্বপ্রথম উঠেন--জিন পুলিন নামের এক বিদেশী ব্যাক্তি,২০০৭ সালে।উনার কাজ হল-"""কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর টপ পিকগুলোতে উঠা"।সে জন্য উনি এদেশে এসে, এই পাহাড়ে উঠেন।উনার সাথে যারা যারা এই পাহাড়ে উঠেন,তারাই এ দেশীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম ওখানে উঠেন।জায়গাটা কতটা দুর্গম এ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়।সাকা হাফং এর মাঝ দিয়েই মূলত মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমানা অঙ্কন করা হয়েছে।তাই বলতে গেলে এটা সম্পূর্ণ আমাদের না।


চতুর্থ দিন
আজকের দিনটাও একটু কষ্টকর বটে।শুনেছিলাম যে ৭-৮ ঘণ্টা ট্রেকিং করে নাকি যেতে হবে,পদ্মমুখ।অনেকে অবশ্য এই পথটা এভয়েট করে যে পথে এসেছে ওই পথেই ফিরে যায়।কিন্তু আমরা যেহেতু এডভেন্চার পছন্দ করি তাই আমরা পদ্মঝিরির পথটাই বেছে নিলাম।হোক না একটু বেশি কষ্ট।যেমন ভাবা তেমন কাজ সকালে সবাই ভালো করে খাওয়া দাওয়া করে রওনা হলাম।রওনা হওয়ার আগে 'লিভিং লেজেন্ড' থুইসার সাথে ছবি তুলে নিলাম।প্রথমে পাহাড় থেকে নামলাম।নামার পর সেই রেমাক্রি নদী পার হয়ে একটা বড় পাহাড় বাইলাম পাহাড় বাওয়ার পর আসলো এক ঝিরি।।এই ঝিরি ধরে হাটতে হাটতে,একসময় আবার পাহাড়ে উঠা লাগলো,পাহাড়ে উঠে দেখি ওখানে একটা নতুন পাড়া হচ্ছে।পাড়ার নামটা স্পষ্ট করে জানতে পারলাম না।কারণ ওখানকার মানুষ বাংলা ভালো বুঝে না।ওখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার ট্রেকিং শুরু।যেতে যেতে একটা পাহাড়ে উঠতে হলো, পরে জানতে পারলাম এটা হলো হরিশচন্দ্র পাহাড়।এই পাহাড়ে উঠলে দেখা যাবে তাজিংডং এর ভালো ভিউ।আরো দেখতে পাবেন দতং পাহাড়,দেবতা পাহাড়,সাকা হাফং পাহাড়।এসব পাহাড় দেখার পর আমরা আবার রওনা দেয়া শুরু করলাম।যতই সামনের দিকে এগুচ্ছি আস্তে আস্তে পাহাড়গুলাও আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে।প্রথমে বিদায় নিলো সাকা হাফং,এরপর এক এক করে দেবতা পাহাড়,দতং পাহাড়।এরপর আমরা এসে পৌছালাম হরিশচন্দ্র পাড়ায়।এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে একটু সামনে গিয়েই দেখলাম হরিশ দাদা উনার বাসায় আরো লোকজন নিয়ে বসে আছেন।আমরা যাওয়াতে উনি আমাদের আমন্ত্রণ জানান।এরপর এখান থেকে আবার নিচে নেমে গেলাম।এরপর পাওয়া গেল একটা সুন্দর ঝিরি।হ্যা,এটাই সেই পদ্মঝিরি।শুরু হলো পদ্মঝিরির সেই অপরুপ সুন্দর পথ,আমরা মনে মনে বলছিলাম যেন এই পথ আর শেষ না হয়!পাহাড়ি ঝিরি পথ ধরে হাটা যে এতো মজাদার হতে পারে, এখানে না আসলে তা বুঝা যাবে না।পাহাড়ি এক এক বাকে এক এক রকম সৌন্দর্য আমাদের চোখে ধরা দেয় এক এক রুপে।এভাবে হাটতে হাটতে সমতল মতো একটা বিশাল একটা মাঠ পেলাম যার উপরে একটা পাড়া আছে,এই পাড়ার নাম রুনজম পাড়া।এই পাড়ার সবুজ মাঠে গা ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম! এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।এরপর আবার শুরু পথচলা।হাটছি আর হাটছি আর পাহাড়ি বুনো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছি।যেতে যেতে পেলাম ঝর্না,এরপর পেলাম এক বাশের সাকো, পুরো যাএায় এ যেন এক নতুন মাএা সংযোজন করলো,সাকো পার করার পর আসলো পদ্মমুখ।অবশেষে ৭ঘণ্টার ট্রেকিং এর সমাপ্তি।আর এই ৩দিনে আমরা টোটাল হেটেছি ৬৫+ কিলোমিটার। আমাদের জন্য নৌকা পদ্মমুখে দাড়ানো ছিলো।এরপর নৌকায় উঠে ৩০-৪০ মিনিটে এসে পৌছালাম থানচি।থানচিতে কটেজ আগে বুক দেয়া ছিলো,উঠলাম কটেজে।এরপর খাওয়া দাওয়া শেষে গেলাম সাঙ্গু নদীতে গোসল করতে।সে এক মজার অনুভূতি।এরপর গেলাম থানচি বাজার টা ঘুরে দেখতে।থানচির পাশে একটা ঝিরি আছে,নাম-*চেনকন ঝিরি*।যাবার সময় তাড়াহুড়া করার জন্য এই ঝিরি দেখা হয় নাই।যারা বান্দরবন এর ভিতরে ট্রেকিং করতে যাবেন তারা এই ঝিরি পথে হেটে তার প্রেকটিস করতে পারেন।২-৩ঘণ্টা সময় লাগবে তাতে।এরপর থানচিতে আছে TNT পাড়াটা ঘুরে দেখতে পারেন।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে থানচি বাজার নিরব হয়ে যাচ্ছে।বাজারে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর ফিরে গেলাম কটেজে।

রুট:-থুইসাপাড়া-হরিশচন্দ্র পাহাড়-হরিশচন্দ্র পাড়া-পদ্মঝিরি-রুনজম পাড়া-পদ্মঝিরির ঝর্ণা-পদ্মমুখ-থানচি

Rs9YLMA8RfyKqOON.jpg

gVTriuatjObF4ZZz.jpg

থুইসাপাড়া:
থুইসাপাড়া তৈরি করেন থুইসা নামক এক ব্যাক্তি।উনি এখনও বেচে আছেন বলে উনাকে আমরা "লিভিং লেজেন্ড" হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলাম।থুইসা ১৯৭৯সনে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই থেকে এখানে চলে আসেন।কারণ উনারা এখানে জায়গা কিনেছিলেন।আর চলে আসার কারণ ছিলো-কাপ্তাই বাধ।এই বাধের কারণে ওখানকার অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।তাই উনি এখানে আসেন এবং পাড়া তৈরি করেন আর তাই উনার নামানুসারে পাড়ার নাম হয় -"থুইসাপাড়া"।
পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে থুইসা এবং থুইসাপাড়ার মানুষজন সহ নির্মাণ করে,জিন্নাহ পাড়া বিজিবি ক্যাম্প,যা এই এলাকার সর্বশেষ ক্যাম্প।থুইসাপাড়ার মোটমাট প্রায় ২০টা পরিবারের বাস।এটি একটি এিপুরা পাড়া।পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই পাড়া থেকে নিচে নামলে পাওয়া যাবে রেমাক্রি খাল।যা ধরে এতো দিন আমরা চলছিলাম।

wmhQiMOkfWbDAadw.jpg

হরিশচন্দ্র পাহাড়:
হরিশচন্দ্র পাড়ার কাছে আরেকটি উচু পাহাড় আছে, এই পাহাড়ের নাম-হরিশচন্দ্র পাহাড়।এই পাহাড়ের উপরে উঠলে দেখা মিলবে-তাজিংডং এর ভালো ভিউ,সাকা হাফং,যত্লং, দতং, দেবতা পাহাড় সহ থুইসাপাড়া,দতং পাড়া এবং জিনাহ পাড়া বিজিবি ক্যাম্প।এরপর সামনে এগুতে থাকলে আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে এই পাহাড়গুলা, মানে দতং,দেবতা,সাকা হাফং পাহাড়গুলা শেষ এখান থেকেই দেখা যাবে।

PnZzu6KeoDJvgcUr.jpg

হরিশচন্দ্র পাড়া:
হরিশচন্দ্র পাহাড় পার করার পর,পড়বে পুরাতন হরিশচন্দ্র পাড়া,আগে পাড়াটি এখানে ছিলো। এরপর সামান্য হেটে একটি পাহাড়ের উপরে গেলে দেখা মিলবে নতুন হরিশচন্দ্র পাড়া।এই পাড়ার নাম হয় আরেক লিভিং লেজেন্ড হরিশেরচন্দ্রের নাম অনুসারে।উনি এই পাড়া তৈরি করেন বলে উনার নামানুসারে পাড়ার নাম হয় হরিশচন্দ্র পাড়া।এখানে রয়েছে একটি স্কুল।আমার দেখা এটা ছিলো বেস্ট একটা স্কুল।এত সুন্দর একটা প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্কুলের ছাএ হওয়া ও আরেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।এই হরিশচন্দ্র পাড়া থেকে আমাদের বিদায় দিতে হয় তাজিংডং কে।

WsuvdsJPPPPHx6W5.jpg

j68s8zFRhxriWcFs.jpg

SZ4H2icXOAYkmIQ1.jpg

xV4oy4aK1ucThyWh.jpg

pnczQ1YbAV4MY5K4.jpg

পদ্মঝিরি:-
হরিশচন্দ্র পাড়া থেকে নিচে নামলে একটা ঝিরি পাওয়া যায়।এটিই হলো সেই-পদ্মঝিরি।এই ঝিরিকে অনুসরণ করেই আমাদের বাকি পথ ট্রেকিং করতে হয়।আশ্চর্য সুন্দর এই ঝিরি ছিলো ট্রেকিং এর জন্য আদর্শ।এর প্রতিটি বাক 

ছিলো অনবদ্য।আর প্রতিটি বাক যেন অপেক্ষায় ছিলো আমাদেরকে চমকে দেবার জন্য।এই ঝিরির শেষ মাথায় আছে পদ্মমুখ।

bnWt4PMPOHh9oYTe.jpg

রুনজম পাড়া:-
পদ্মঝিরি ধরে চলতে চলতে একসময় আসবে এই পাড়াটি।রুনজম পাড়ার নিচে সমতল মতো জায়গাটিতে সবাই বিশ্রাম নেয়।এটি সম্ভবত একটি মারমা পাড়া।

9wlzujvUacbDfwNo.jpg

পদ্মঝিরির ঝর্ণা:-
পদ্মঝিরি ধরে হাটতে থাকলে,পদ্মমুখের কাছাকাছি এক জায়গায় দেখা মিলবে এই ঝর্ণার।এই ঝর্ণা পুরো ভ্রমণে যোগ করে এক নতুন মাএা।

QoVfrcb5UVCOZVPZ.jpg

IKJfN8g8KyjcYhZw.jpg

6I6LIorE9rC5IOjd.jpg

ff18MJPcvWXnWkiB.jpg

icNQoXV0FAbKDQzs.jpg

uA8wTxFFqYSqnTN7.jpg

vTWJE0SHZvg0YQIR.jpg

পদ্মমুখ:-
পদ্মঝিরি ধরে হাটতে হাটতে,এর শেষ মাথায় যেখানে পদ্মঝিরি সাঙ্গুর সাথে মিলে ওই জায়গাটা হলো পদ্মমুখ।এখানে রয়েছে বাশের এক সাকো,যা চলতি পথে যোগ করেছে আরেক নতুন মাএা।এখান থেকে সবাই নৌকায় উঠে আবার থানচির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।


পঞ্চম দিন
১৮/০৩/১৮
দিনটি ছিলো আমাদের ভ্রমণের শেষ দিন।এটি চিন্তা করতেই কেমন যেন লাগছিলো।

সকালে নাস্তা খেয়ে আগে থেকে ঠিক করে রাখা চাদের গাড়িতে উঠলাম।আজকের টার্গেট ৮টা স্পট ঘুরা।যাবার পথে পড়লো বলিপাড়া,এরপর গাড়ি থামলো নীলদিগন্ততে। কিছুসময় পার করার পর গেলাম নীলগিরিতে। আসলে যারা বান্দরবন এর গহিনে গিয়েছে তাদের কাছে এসব সৌন্দর্যকে তুচ্ছ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক,এরপর *পিক-৬৯ *(আপনাদের হাতে সময় থাকলে এখানে নেমে ছবি তুলতে পারেন) হয়ে আসলাম চিম্বুক পাহাড়।এখান থেকে এরপর গেলাম শৈলপ্রপাত,মিলনছড়ি হয়ে বান্দরবন শহরে,শহরে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা গেলাম 'রামজাদির মন্দিরে', এরপর স্বর্ণমন্দির দেখা শেষে নীলাচলে গেলাম দিনের সূর্যাস্ত দেখতে,নীলাচল এর বিকেলের পরিবেশ টা বেশ ভালোই লাগলো।এরপর আবার ফিরে আসলাম শহরের বাস স্ট্যান্ড এ।রাতের বাস ধরে ফিরে আসলাম আবার সেই জনবহুল,ব্যস্ততম নগরীতে।

রুট:-

থানচি-বলিপাড়া-নীলদিগন্ত-নীলগিরি-পিক ৬৯-চিম্বুক পাহাড়-শৈল প্রপাত-মিলনছড়ি-বান্দরবন শহর-রামজাদির মন্দির-স্বর্নমন্দির-নীলাচল-বান্দরবন শহর-ঢাকা

syv8SHL10Htzi0ps.jpg

বলিপাড়া--------
থানচি ছেড়ে আসলে এই পাড়ার দেখা মিলবে।এখানে আছে একটি বিজিবি ক্যাম্প

xhEZUrrjyGEhK80V.jpg

নীলদিগন্ত--------
বান্দরবন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠা সাম্প্রতিক কয়েকটি স্থাপনার এটি একটি। এখানে রয়েছে বেশ ভালো একটি ভিউ পয়েন্ট।এখান থেকে দেখা মিলবে আকাবাকা সর্পিল আকারের নয়ানাভিরাম রাস্তার দৃশ্যসহ বিস্তৃত পাহাড়ের সবুজ শ্যামলিমা।

H7MDeFbCUTmERMDU.jpg

নীলগিরি---------
বান্দরবনের নাম শুনেছে নীলগিরির নাম শুনে নি অথবা বান্দরবন বেড়াতে এসে নীলগিরিতে যায় নি এমন মানুষ মনে হয় পাওয়া যাবে না।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই স্থানে রয়েছে পরিবার সহ থাকার ভালো ব্যবস্থা।নীলগিরি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫০০ফুট উচুতে অবস্থিত।এখানে পাহাড়ের নীস্তবদ্ধতায় বয়ে চলে শন শন বাতাস,বাধাহীন দৃষ্টির সীমায় আকাশ ঠেকেছে পাহাড়ে।চাইলে এখানে রাতে থেকে সকালে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন মেঘেদের রাজ্যে।এখানে একটি ভালো ভিউ পয়েন্ট আছে যেখান থেকে আপনি দেখতে পাবেন বয়ে চলা সাঙ্গু নদী।


পিক ৬৯---------
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ার রাস্তাই হলো পিক ৬৯।সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪০০০ফুট উচু এই রাস্তা।

QUvoXMDeNZbNWDY9.jpg

চিম্বুক পাহাড়-------
"বাংলার দার্জিলিং" খ্যাত চিম্বুক পাহাড় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৩০০ফুট উচুতে অবস্থিত।তবে অনেকে একে বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় বলে মনে করত।এখানে আছে টিএনটি বোর্ডের একটি বেস স্টেশন এবং বাংলাদেশ সড়ক বিভাগের একটি সুদ্শ্য রেস্টহাউস।এরআশেপাশের বসবাসকারী আদিবাসীরা সব হলো-মুরং।

aBAUTmMH0ByvUSKj.jpg

শৈলপ্রপাত-------
বান্দরবন শহর হতে থানচি যেতে পথের আরেকটি স্পট হলো এই শৈলপ্রপাত নামক ঝর্ণা।ফারুকপাড়ার পাশের এই ঝর্ণাটি শুকনো মৌসুমে এতটা পানি না থাকলে বর্ষা মৌসুমে প্রকাশ পায় এর হিংস্র রুপ।এরপাশের মানুষরা হলো বম সম্প্রদায়ের।ওরাই এই ঝর্ণার পানি ব্যবহার করে।তাই আমাদের উচিত এই ঝর্ণা যেন কোনক্রমেই যেন ময়লা না হয় সেদিকে নজর রাখা।


মিলনছড়ি---------
এখান থেকে দেখা মিলবে আকাবাকা বয়ে চলা সাঙ্গুর সাথে সমতলের এক মিতালী।নীলদিগন্তের মতে এখানেও একটি ভালো ভিউ পয়েন্ট তৈরি করা সম্ভব।

CUpbrbGTLRsMsn9f.jpg

রামজাদীর মন্দির-------
বান্দরবন বেড়াতে আসলে মানুষ যে কয়েকটি স্পট মিস করে তার একটি হলো এই রামজাদীর মন্দির।এটি বান্দরবনের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত।শহর হতে বালাঘাটা ব্রিজ পেরিয়ে,রোয়াংছড়ির রাস্তা ধরে ২কিমি গেলেই দেখা মিলবে এই মন্দিরের।এর কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালের দিকে।বলা যেতে পারে এটি একটি নতুন মন্দির।তবে এটি সৃষ্টির একটি সুন্দর ইতিহাস রয়েছে।
--বৌদ্ধ ধর্মমতে,গৌতমবুদ্ধের পর আরো অনেক ধর্মগুরু পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন।আর্যাতিত বুদ্ধ প্রথম, উনার পরে আসবেন রামবুদ্ধ।এই রামবুদ্ধ অতীত কোন এককালে এই স্থানে অবস্থান করেছিলেন।বান্দরবনে ধর্মগুরু উছলা ভান্থের অদৃশ্য গুরু সেংরেসিয়াদের গায়েবি নির্দেশে এই পাহাড়টি পরিষ্কার করেন এবং নাম রাখেন-রামজাদী।

rtvVxRT8Kxvuswou.jpg

স্বর্ণমন্দির-----
এর আরেক নাম বুদ্ধ ধাতু জাদী মন্দির।শহর থেকে এটি ৪কিমি দূরে অবস্থিত।এখানে প্রত্যেকবার শুভ সময় দেখে অনুষ্ঠিত হয় জাদী মেলা।তবে তখন পর্যটকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করা হয়।১৯৯২সালে শুরু হয় এর কাজ।মায়ানমার থেকে আনা হয় নির্মাণশিল্পী।সংরক্ষণ করা হয় বিভিন্ন শতকের বিভিন্ন স্থানের মূর্তি।আর গৌতমবুদ্ধের শরীরের কোন এক অংশবিশেষ এখানে আছে বলে,এর নাম হয় বুদ্ধ ধাতু জাদী মন্দির।

tyYAHVsqcVXgGTxD.jpg

নীলাচল--------
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ফুট উচুতে অবস্থিত।এর আরেক নাম হল টাইগার হিল।এখান থেকে রাতের বেলার বান্দরবন শহর দেখা যায়।কিন্তু,সবচেয়ে ভালো লাগে নীলাচলের বিকালের প্রাকৃতিক নির্মল ঠাণ্ডা বাতাস।নীলাচলের নিচে রয়েছে একটি বড় গুহা যার মধ্যে আছে আরো তিনটা গুহা।কথিত রয়েছে এখানে নাকি ছবি তুললে ছবি আসে না।এই গুহার নাম হলো-মহাদেবের গুহা।মহাদেব নামক এক লোক এই গুহা আবিষ্কার করেন বলে এর নাম হয় মহাদেবের গুহা।

------------------------


#Inspired by: Tinku Chowdhury

Written Byজুনায়েদ জাকির অর্ণব

#বান্দরবান
  • Share
  • Tweet
  • Share

You Might Also Like...

Bandarban - বান্দরবান
বান্দরবান ভ্রমণ
বান্দরবান - ২০১৮

Leave a Reply

By posting comment you will be registered as a user. You can log in by this credential in the future.
Or, fill the comment and register with social network

0 Comments

  • Share
  • Tweet
  • Share

DURBEEN TRAVEL & TOURISM
  • Home
  • About
  • Contact
support@durbeentravel.com

Copyright © 2018 by Shunno-ek Technology. All Rights Reserved.
  • Log in

Sign In

Chose One of the Following Methods.

With Facebook
Or

Sign in Using Your Email Address

Forgot Password?
Don't have an account? Sign up Now