Sajek Valley - সাজেক ভ্রমণ - কংলাক পাহাড়, আলুটিলা গুহা, তারেং, হাজাছড়া ঝর্না, ঝুলন্ত ব্রিজ ট্যুর
Sajek Tour
সাজেক - একটি রুপকথার দেশ ভ্রমণের গল্প ......
------
আমার এবারের ট্যুর ছিল মেঘের দেশ সাজেকে।। সেই গল্পই বলছি --
"এখন পর্যন্ত যে কয়টা ট্যুর দিয়েছি সেগুলো সব একদিনের এবং ঢাকার কাছাকাছি। এই প্রথমবার এত দূরের একটা ট্যুর দিলাম। সাজেক যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো অনেকদিন ধরেই। বরাবরের মতই সাগরের চেয়ে পাহাড় আমাকে বেশি টানে, সেই সূত্রেই এক ছুটে সাজেক যাওয়া।
আমার সাজেক ট্যুরের বিস্তারিত এবং সাজেকের সৌন্দর্য দেখতে আমার ভিডিও দেখতে পারেন।
লিঙ্ক -- https://youtu.be/GGJKMhJ2YkU
------
-- ২৪ তারিখ রাত ১১.৩০ টায় যথারীতি বাসে করে রওনা দিলাম মেঘের দেশ সাজেকের উদ্দেশ্যে।
পরদিন সকালে পৌঁছে গেলাম খাগড়াছড়ি শহরে। এরপর নেমে খাওয়া দাওয়া করে চাঁদের গাড়িতে চড়ে বসলাম। শুরু হলো পাহাড় দেখা এবং পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ছুটে চলা। দু পাশে পাহাড় আর সবুজের এই রুপ
আমাকে একদম অন্য জগতে নিয়ে গেলো। এ যেন চোখের এবং মনের শান্তি ।। পাহাড়ের কিনার ধরে ছুটে চলা চাঁদের গাড়ি এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
এভাবে ছুটে চলতে চলতে অবশেষে চলে আসলাম সেই সাজেক।। প্রিয় সাজেক।। আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছি যেন এক ঘোরের মধ্যে আছি।। এত সুন্দর!! আসলেই!!
যাই হোক, গাড়ি থেকে নেমে আমরা আমাদের কটেজে উঠলাম। উঠেই ছুটে গেলাম বারান্দায়! এ কি!! এ কোথায় আসলাম!! সামনে শুধু পাহাড় আর পাহাড় !! এ দৃশ্য বর্ণনা করে লিখার মত শব্দ আমার কাছে নেই।
আমাদের কটেজের বারান্দা থেকে সাজেকের পাহাড়ের যে ভিউ পেলাম সেটা ভুলার নয়।।
যাইহোক, আমরা ফ্রেশ হয়ে এরপর খেতে চলে গেলাম সিনারী হোটেলে।। খাবারটা অসাধারন। পেট যেমন ভরছে তেমনি মন!
খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসলাম, এরপর বারান্দায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম! চোখের সামনে খোলা আকাশ, পাহাড় আর সবুজের সমারোহ!! এরকম দৃশ্য কল্পনার অতীত!! এরকম শুদ্ধ বাতাস মনে হয় কেবল সেখানেই আছে।।
আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড় দেখার জন্য । সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।
যাই হোক, সেখানে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আমরা উপরে উঠলাম। উপরে উঠার পর চোখ যেন আটকে গেল!! চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড় !! আর এত উঁচুতে আছি মনে হচ্ছে যেন হাত বাড়ালেই আকাশ ছুঁয়ে দিতে পারবো!! সূর্য ততক্ষণে লাল বর্ণ ধারন করেছে, ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্ত ! অবশেষে সূর্যাস্ত দেখে সেখান থেকে ফিরলাম কটেজে।। কটেজে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হলাম। হাঁটাহাঁটি করলাম। ঘুরলাম, দেখলাম।।
অসাধারণ সাজেক!!
এরপর আমরা ডিনার করতে বসলাম সেই সিনারী হোটেলে। মেনু ছিল স্পেশাল ব্যাম্বু চিকেন এবং আরো অনেক কিছু।। খুব তৃপ্তি নিয়েই খেলাম আমরা।।
এরপর আরো কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা আবার রুমে গেলাম।।
বারান্দায় বসে রাতের আকাশের এত তারা আর চাঁদের আলো দেখে জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম!! এত সৌন্দর্য চোখে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিলো না! চাঁদের আলো বারান্দায় এসে পরছিলো আর সেখানে বসে আমরা দূর পাহাড়ের
সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।।
হঠাৎ করেই কি ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা রাতের আকাশের তারা আর চাঁদের সাথে ছবি তুলবো। যত রাত হয় হোক। এইটা মিস করা যাবেই না।।
অতঃপর রাতে আমরা বের হলাম।। সমগ্র সাজেক যখন গভীর ঘুমে মগ্ন ঠিক তখন আমরা পাঁচ জন বের হলাম চাঁদ এবং তারার সঙ্গী হতে।। সাজেকের রাস্তায় কিছু ছবি নিলাম এবং হেলিপ্যাডে গিয়ে কিছু ছবি নিলাম।
এরপর রাত আড়াইটায় আমরা রুমে ফিরলাম।। আসতেই ইচ্ছে করছিলো না! মনে হচ্ছিলো রাত টা বাইরেই কাটিয়ে দেই! এত সুন্দর রাত আগে কখনো দেখিনি! এখনো যেন চোখে লেগে আছে!
অতঃপর আমরা যথারীতি সকালের সূর্যোদয় মিস করছি রাতের এই কাহিনীর জন্য।। কিন্তু আফসোস নেই।। রাতের যে ভিউ আমরা পেয়েছি সেটার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না!
পরদিন আমরা সকালের নাস্তা করে কটেজে এসে ব্যাগ গুছায়ে চলে গেলাম আলুটিলা গুহা দেখতে।।
খাগড়াছড়ির সেই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পার হয়ে আমরা চলে আসি আলুটিলা গুহায়।। গুহায় ঢুকার জন্য একটা এক্সসাইট্মেন্ট কাজ করছিল যেহেতু আগে কখনোই দেখিনি আমি।।
যাই হোক গুহায় ঢুকেই আমি একদম অবাক।। এত সুন্দর! দেখে মনে হয় একদম কি যেন রহস্য এর মধ্যে! গুহার ভিতরে একদম অন্ধকার। মোবাইলের ফ্ল্যাশ আর মশাল দিয়ে গেলাম।। হাল্কা ঝিরঝির পানি ছিল।
গুহার ভিতর উঁচুনিচু পাথরের পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে বের হলাম।।
আলুটিলা গুহা ঘুরে আমরা গেলাম তারেং দেখতে।। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে গাড়িতে সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় আলুটিলার তারেং পর্যটন এলাকায়।
ত্রিপুরা ভাষায় ‘তারেং’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘উঁচু পাহাড়’।
তারেং এ এসে আরো অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম চারিদিকে।। এ যেন পুরো খাগড়াছড়ি শহর কে দেখছি।। উপর থেকে বড় বড় কিছু বিল্ডিং কেও ছোট্ট খেলনার মত লাগছিল। বুঝলাম আমরা অনেক উপরে আছি।।
এ দৃশ্য ভুলার নয়! চোখের সামনে শূন্যতা।। একদম নিচে শহরের সব কিছু !! মনে হচ্ছিল পাখি হয়ে এত উপরে চলে আসছি! যেন ডানা আছে আমার! এখনি আবার উড়ে যাবো আরেক জায়গায়!
এরপর আমরা তারেং ঘুরা শেষ করে চলে আসি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক দেখতে।। এখানের ঝুলন্ত ব্রিজ টা মোটামুটি সুপরিচিত। অনেকেই আসে দেখলাম।। বেশ দারুন একটা পার্ক। পার্ক পুরোটা ঘুরলাম আমরা।
বেশ ভালো লাগছে জায়গাটা" ..।।
--------------- এই ছিল আমাদের ভ্রমন গল্প। এ যেন এক রুপকথার দেশে চলে গিয়েছিলাম!! এত সুন্দর একটা জায়গা লিখে বুঝানো যাবে না!
ভালো থেকো সাজেক
ভালোবাসার বাংলাদেশ
বিঃ দ্রঃ যেখানেই যান সেখানকার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।। ময়লা নির্ধারিত স্থানে ফেলুন। আর অনেক বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে এই জায়গা গুলো, তাই এখানকার পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকবেন সবাই
1 Comments